পুলিশ হবে গণমানুষের আস্থার জায়গা’ এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে উদযাপিত হলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস।

শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম, রাজারবাগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কেক কেটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার)।

ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সেবার মান বেড়েছে। থানাগুলোতে নারী ও শিশু বান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পুলিশের সেবা আরো সহজ করতে চালু হয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। পুলিশের ওয়ান স্টপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস এবং নারী ও শিশুদের সেবায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অধীনে রয়েছে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ যা পুলিশের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশ যে সফলতা দেখিয়েছে তা সারাবিশ্বে আজ প্রশংসার দাবিদার। এখনকার পুলিশ আর আগের পুলিশ এক নয়। করোনা মহামারির সময় যখন সন্তান বাবার লাশ হাসপাতাল থেকে নিতে চায়নি, তখন পুলিশই তাকে দাফনের ব্যবস্থা করেছে। অতীতে রাজধানীতে অগ্নিসন্ত্রাস দমনে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন পুলিশ দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষের সেবা দিচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ পুলিশ মাদক, সন্ত্রাস দমনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। করোনাকালে সারাবিশ্ব যখন স্থবির হয়ে পড়েছিলো তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে পুলিশকে উন্নত দেশের পুলিশের কাতারে নিয়ে যেতে কাজ করছে সরকার।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, আজকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের একটি দিন। ঢাকা একটি বিশাল ঐতিহ্যবাহী শহর। ৪শত বছরের ইতিহাস এই ঢাকা শহরের। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে প্রায় দুই কোটির উপরে মানুষ বসবাস করে। ঢাকা মহানগরে দুই কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৩০ হাজারের মতো পুলিশ আছে। এ স্বল্প জনবল দিয়ে পুলিশ জনগণকে যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা অকল্পনীয়। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নতুন নতুন অপরাধের যে ধরনগুলো আসছে তার মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ একটি কাজ। যে কাজটি বাংলাদেশের মুখচ্ছবি হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ করে যাচ্ছে। এইসব অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ও গ্রেফতার করার সে সক্ষমতা রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের। পুলিশের চাকরি অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমরা সবাই যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকি তখন আমাদের নিরাপত্তার জন্য রাত জেগে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে পুলিশ। গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে মূল ভূমিকা রাখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এটা মনে রেখে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।

ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন,যখন করোনা আক্রান্ত সন্তানকে তার মাকে ত্যাগ করেছে, পুলিশ তখন সেই সন্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে।

আইজিপি বলেন,থানাকে সর্বোচ্চ আস্থার জায়গা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে। দেশের মানুষ যখনই কোনো সমস্যায় পড়েছে, তখনই পুলিশের কাছে এসেছে। সেই আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটাকে আমাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে লালন করতে হবে। কনস্টেবল থেকে শুরু করে আইজিপি পর্যন্ত সকলের ভূমিকা ও একই মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা সবাই মিলে দুর্নীতির মতো সর্বশেষ কলঙ্কচিহ্ন পায়ের নিচে ধুয়ে-মুছে ফেলতে চাই। পুলিশকে এমন একটি সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যেখানে কোন দুর্নীতি থাকবে না। পুলিশ থেকে দুর্নীতিকে আমরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে চাই। কারণ মানুষ চায় একটি সৎ, স্বচ্ছ পুলিশ বাহিনী। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে নৈতিক, সৎ, নিষ্ঠাবান, পেশাদার ও পরিশ্রমী সদস্যদের দিয়ে সৎ ও স্বচ্ছ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব।

আইজিপি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, বিলিয়ে দিয়েছিল নিজেদের তাজা রক্ত। পুলিশের যারা কাজ করেন, তারা এই দেশের মানুষ, সমাজের মানুষ। সেজন্য আমাদের হতে হবে দেশের মানুষের কাছেরই একজন। বাংলাদেশের সব বড় ক্রান্তিকালে দেশাত্মবোধ নিয়ে সামনে থেকে কাজ করেছে পুলিশ। এই করোনাকালেও ৮৫ সদস্য জীবন দিয়েছেন। ২১ হাজার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সদস্য ডিএমপির। মহামারি পরিস্থিতিতেও সারাদেশে মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সেবার মানসিকতা নিয়ে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করেছে, সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে ফ্রন্টলাইনার খ্যাতি কুড়িয়েছে। নাগরিকের সঙ্গে পুলিশের পার্টনারশিপ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবসে নগরবাসীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মন্ত্রে দীক্ষিত। মানুষের সেবা করার সুযোগ সবার থাকে না। পুলিশের সেই সুযোগ রয়েছে। যে কোন দুর্দিনে নগরবাসীর পাশে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশের সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। যা অপরাধ দমন ও সামাজিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পুলিশ হবে জনগণের অতি আপনজন ও আস্থার জায়গা।

ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও সাংবাদিকগণ।

আলোচনা শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশের খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরি, অর্ণব, গজল শিল্পী আরিফুল ইসলাম মিঠু ও রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সুনিধি নায়েক ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীবৃন্দ এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন