জাতীয় প্রেস ক্লাবে পুলিশ ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশকে প্রতিপক্ষ বানানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম(বার)।

তিনি বলেছেন, ‘পুলিশকে কেন প্রতিপক্ষ বানানো হয়? এই প্রশ্ন বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রতি। যারা দেশের ও পুলিশের সমালোচনা করে তাদের মুখে ছাই পড়ুক। দেশের মধ্যে যে একটা ছোট অংশ আছে সেটা দেখলেই বোঝা যায়। কারণ দেশের কোনো ভালো কিছুর প্রতি তাদের আগ্রহ নেই। ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন চেতনার মানুষগুলো আমাদের দেশের মানুষ হিসেবে দাবি করে। এই মানুষগুলোকে আমাদের দেশের বৃহত্তর জাতিসত্তা থেকে আলাদা করার সময় এসেছে। এরা আমাদের জাতির অংশ নয়।’

সোমবার (১ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইজিপি। কর্মস্থলে নিহতদের স্মরণে প্রতি বছর ১ মার্চ ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’র আয়োজন করা হয়। এবারের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন।

পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‌‘পুলিশ তো কারও প্রতিপক্ষ নয়। ওই ছোট একটা গ্রুপ যারা দেশের কোনো ভালো কিছু দেখেন না এবং সমালোচনা করেন, এমনকি তারা পুলিশের সমালোচনা করেন তাদের মুখে ছাই পড়ুক। এ দেশের প্রকৃতিতে যারা বড় হয়ে ছুরি মারতে চায় তাদের মুখে আমরা দেশবাসী সবাই মিলে ছাই ছুড়ে দিতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে, বনশত্রুদের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পুলিশ যুদ্ধ করে। এই যুদ্ধ ক্রমাগত, অবিরত ও অবিরাম। যুদ্ধ হলেই অবিরামভাবে আসে মৃত্যু। সে কারণে প্রতি বছর আমাদের ডজন ডজন সহকর্মীকে হারাই।’

‘পুলিশে এই মৃত্যুর মিছিল, শাহাদতবরণকারীদের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আমরা আর কোনো মৃত্যু দেখতে চাই না। আমাদের পরিবারও মৃত্যু দেখতে চায় না।’

আইজিপি বলেন, ‘এই করোনাকালেও পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৮৫ জন সদস্যকে আমরা হারিয়েছি। সেই সঙ্গে করোনাকালে প্রায় ২১ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, সুস্থ হয়েছেন এবং আবার সুস্থ হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশ সম্মুখসারিতে থেকে দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশ পুলিশ তাদের দক্ষতা ও দৃঢ়তার যে সাক্ষ্য দিয়েছে তা দিয়ে তারা জনগণের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।’

পুলিশ প্রধান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আইজিপি বলেন, নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করেছেন।

নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জীবনের কোন বিনিময় মূল্য হতে পারে না। আপনারা আপনজন হারিয়েছেন, আপনাদের ক্ষতি অপূরণীয়। পুলিশ একটি পরিবার। আপনাদের খোঁজ-খবর রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের সীমিত সামর্থের মধ্য দিয়ে আমরা এ দায়িত্ব পালন করছি।

আইজিপি জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের নামে পুলিশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণ করা হবে বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ‘মেমোরিয়াল ডে’ পালিত হয়। আবার পুলিশের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততাকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘ব্লু রিবন ডে’ উদযাপন করা হয়। এদিন জনগণ পুলিশের সাথে তাদের সংহতি প্রকাশ করে। পুলিশের সাথে জনগণের শ্রদ্ধার, ভালবাসার যে সম্পর্ক রয়েছে তা দিনটিতে প্রতিভাত হয়। তিনি ‘ব্লু রিবন ডে’ পালনের অনুমতি প্রদানের জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, আইন-শৃঙ্খলা ও জনগণের জানমাল রক্ষার মত ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালে ২০২০ সালে দায়িত্বরত অবস্থায় ২০৮ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। অনুষ্ঠানে তাদের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিহত হন। তারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তারা যেন আমাদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকেন।

কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যগণ আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার মতো চরম আত্মত্যাগ প্রদর্শন করে দায়িত্ব পালনের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সেজন্য পুলিশ বাহিনীসহ সারাদেশ আজ গর্বিত।

তিনি বলেন, শুধু দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নয়, করোনাকালেও পুলিশ মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছি আমরা। উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ত যদি নিরাপত্তা বিধান করা না যেত। পুলিশ বাহিনীর ওপর অর্পিত দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করছে বলেই দেশ নিরাপদ রয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, ২০১৯ সালে দায়িত্ব পালনকালে ১৭৯ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, ২০২০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ালো ২০৮। আমরা এ ধরনের অকাল মৃত্যু, অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো। আমরা চাইবো কারো জন্য অকাল মৃত্যু না হয়, অস্বাভাবিক মৃত্যু না হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ এখন যে কোন সংকট মোকাবেলায় সক্ষম। মানবিক পুলিশ হিসেবেও পুলিশ বাহিনী ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। মানুষ যখন কোন সমস্যায় পড়ে তখনই পুলিশের শরণাপন্ন হয়। তাই আমরা বলি, পুলিশ হবে মানবিক, পুলিশ হবে জনতার। করোনা মহামারীকালে পুলিশ যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে, তা সত্যিই বিরল। তিনি বলেন, এ দেশের জনগণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সহানুভূতি নিয়ে কাজ করার এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

‘পুলিশ যে কোন সংকটে নির্ভিক চিত্তে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে বলেই দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় আছে, দেশের উন্নতি হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।’

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত এবং তাদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মোঃ মাজহারুল ইসলাম।

 

এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১ মার্চ দায়িত্বরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালন করা হচ্ছে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন