যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে : ডিএমপি কমিশনার

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 17 দর্শন

 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেছেন, যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণির লোকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদে প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

হলি আর্টিজান বেকারিতে সেই সন্ত্রাসী হামলার আট বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। এ উপলক্ষে আজ সোমবার (১ জুলাই ২০২৪) সকালে ডিএমপির গুলশান থানা ভবনের সামনে নির্মিত ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ডিএমপি কমিশনার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, বাংলাদেশও তার থেকে মুক্ত নয়। তবে বাংলাদেশ পুলিশের এন্টিটেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও অন্যান্য সহযোগী যে সংস্থা রয়েছে জঙ্গি দমনে তাদের দক্ষতা ও দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ জঙ্গি দমনে বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিভিন্ন দেশে আমরা দেখে থাকি যে, জঙ্গি আক্রমণ হওয়ার পরে অপারেশন চালানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র উদাহরণ যে বিভিন্ন অপারেশন আমরা চালাতে সক্ষম হয়েছি জঙ্গি আক্রমণ হওয়ার আগেই। আমরা গোয়েন্দাভিত্তিক কার্যক্রম চালিয়ে জঙ্গি হামলা সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহ করে অভিযান চালিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই জঙ্গি নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি।

অনলাইনে মতবাদ ছাড়ানোর সাথে সংশ্লিষ্ট উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ওপর হামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ গুলোর জন্য আমাদের বিশেষ করে সিটিটিসির (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) পাশাপাশি ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি), ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং আরও যে সব গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্ট যে কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি কিংবা সংগঠনই হোক তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আমাদের তৎপরতা রয়েছে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে।

অনলাইনে জঙ্গিবাদের প্রচারের বিষয় সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের দমনে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বা বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে যে সমস্ত তৎপরতা রয়েছে তার পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণির লোকজন ও বিশেষ করে মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে প্রত্যেক বাবা-মা বা অভিভাবক তাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কীভাবে চলছে, কাদের সাথে মিশছে, কতক্ষণ একা থাকছে ও কতক্ষণ মোবাইল নিয়ে অনলাইনে থাকছে, তারা যদি এই বিষয়গুলো একটু লক্ষ্য রাখে তাহলে আমি মনে করি এই দেশে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে যাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে।

আজ সকালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন, ৩০তম বিসিএস পুলিশ ফোরাম ও বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন গুলশান থানা ভবনের সামনে নির্মিত ‘দীপ্ত শপথ’ভাস্কর্যে পৃথকভাবে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম-বার (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার; যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলার এ ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই। সে দিন ছিল শুক্রবার। রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পাঁচজনের একটি সন্ত্রাসী দল অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীদের নৃশংসতার বলি হয় দেশি-বিদেশিসহ মোট ২২ জন নাগরিক। যার মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয়, বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক ১ জন এবং ২ জন বাংলাদেশীসহ ২ জন পুলিশ কর্মকর্তা। রাতভর এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ অভিযানে উদ্ধার হয় জীবিত ৩২ জন। প্রথমে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয় ২ জন বিদেশিসহ ১৯ জন, এরপর সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হয় দেশি-বিদেশি মোট ১৩ জন। এই সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে অকালে আত্মত্যাগ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই নির্ভীক কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সালাহ উদ্দিন খান। হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের আত্মত্যাগ স্মরণ করতে গুলশান থানা ভবনের সামনে ২০১৮ সালের ১ জুলাই ‘দীপ্ত শপথ’ নামে একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয়।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন