সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মাধ্যমেই উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে দেশের সাধারণ মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন আর হৃদয়ের অতল থেকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মাদক নির্মূলে শুন্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ করে পেয়েছে সাফল্য। নিজেদের পরিণত করেছেন দেশবাসীর আস্থার প্রতীকে।
গত ১৭ বছরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও ‘অপরিহার্য’ পুলিশের এই সংস্থাটি। কিন্তু এলিট ফোর্স র্যাবের দীর্ঘ অর্জিত ইমেজ ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে শুরু হয়েছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। ইতোমধ্যেই সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নকশায় র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বানোয়াট এক অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাবের এই কর্মকর্তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটির রাজস্ব বিভাগ। অথচ প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তীব্রভাবে সমালোচিত একটি দেশের এমন ঘোষণাকে ঘৃণাভরেই প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের মানুষ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা আরোপকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলেই মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ (কেএম) আজাদও। তাঁরা সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানবাধিকার রক্ষা করেছে।’
মার্কিনিদের মানবাধিকারের বুলিকে ফুৎকারে উড়িয়ে রীতিমতোন তাদের ধুয়ে দিচ্ছন নেটিজেনরাও। তারা বলছেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পুলিশ নির্বিচারে সাধারণ মানুষ এবং শিশুদের হত্যা করছে।
জাতিগত বৈষম্য, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা, এবং পররাষ্ট্রনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে আমেরিকায় মানবাধিকার লঙ্ঘন স্পষ্ট।দেশটির পুলিশের হাতে আফ্রিকান-আমেরিকানদের হত্যা এবং আটক করার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন ওপেন সিক্রেট। এমন দেশটির মুখে মানবাধিকারের ‘ছবক’ একেবারেই বেমানান।
ইতোপূর্বে চীনও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভন্ডামির অভিযোগ তুলেছিল।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন র্যাবের সাবেক ডিজি ও পুলিশের বর্তমান আইজি ড.বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান ও কক্সবাজারে র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এক ভিডিও বার্তায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বস্তুনিষ্ঠভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তারা অতিরঞ্জিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ আমাদের পুলিশ কখনো কাউকে ক্রস ফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যা করে না। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা চ্যালেঞ্জিং। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুন্দরভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করছে।’
অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা কী মানবাধিকার লঙ্ঘন, এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল খান মোহাম্মদ আজাদ প্রতিবেদক কে বলেছেন, ‘যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, খুন করে ধর্ষণ করে মাদক ব্যবসা চালায়, দেশ এবং জনগণের স্বার্থেই আমরা তাদের আইনের আওতায় আনে র্যাব।’
তিনি বলেন, ‘অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে থাকে, তাহলে দেশের স্বার্থে এই মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে আমাদের আপত্তি নেই।’
বিষয়টি খোলাসা করে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘কোনো অস্ত্রধারী যদি আমাদের ওপর গুলি চালায় তাহলে কী আমরা প্রতিরোধ করবো না। আমরা কি গুলি খাওয়ার জন্য বুক পেতে দেব?’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডব্লিউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করে চলেছে প্রতিনিয়ত। এক প্রতিবেদনে তারা বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ উভয় বর্ণের মানুষ সমপরিমাণে মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত রয়েছে। এ সত্ত্বেও মাদক সংক্রান্ত অপরাধের দায়ে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকহারে আটক এবং বিচার করা হয়।
আমেরিকার জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী হলেও মাদক সংক্রান্ত অপরাধের দায়ে আটক ব্যক্তিদের ২৯ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ। আমেরিকায় সাদাদের তুলনায় কালো মানুষদের ছয় গুণ বেশি আটকের ঘটনা ঘটে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া, এতে পুলিশের হাতে অধিক হারে নিরস্ত্র আফ্রিকান-আমেরিকান হত্যার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতি বছর পুলিশের হাতে কতো সংখ্যক মানুষ নিহত হয় তার হিসাব-কিতাব মার্কিন সরকার রাখে না। এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকায় জামিনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাতে না পারায় দরিদ্র শ্রেণীর মানুষকে অহেতুক দীর্ঘদিন আটক থাকতে হয়।
অপরদিকে সাধারন মানুষের কাছে র্যাব এখন আস্থার প্রতিক হিসাবে সুনাম অর্জন করে চলেছেন। কেউ বলেন, চাঞ্চল্যকর মামলা গুলো বিজ্ঞ আদালত ইদানিং পুলিশ কে না দিয়ে র্যাব কে তদন্তের দায়িত্ব দিচ্ছেেন। নিশ্চয় বিঞ্জ আলাদত র্যাব কে যোগ্য মনে করেই বড় বড় মামলার তদন্তরের দায়িত্বভার র্যাব কে দেন।এক সময় সুন্দরবনে কেউ নৌকা – টলার যোগে বেড়াতে গেলে বা মাছ ধরতে গেলে জলদস্যুরা তাদের কে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতো। কিন্তু র্যাবের নিরালস চেষ্টায় সুন্দরবন এখন বনদস্যু ও জলদস্যু মুক্ত হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয় র্যাব কয়েক হাজার জলদস্যু ও বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে তাদের কে পুনর্বাসিত করার জন্য নানা ভাবে আর্থিক সহযোগীতা করে যাচ্ছে। র্যাবের ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশনা মোতাবেক র্যাবের প্রত্যেক বিভাগের ইউনিট প্রধানরা করোনা কালে কর্মহীন মানুষকে বস্তাভর্ত্তি ( চাল-ডাল-আটা-তেল-লবন-সাবান) দিয়ে মানবতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন যেটা বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকা গুলোতে লিড নিউজ হিসাবে প্রচার করা হয়েছিলো। র্যাব এগিয়ে যাবে তার কাঙ্খিত লক্ষে এটাই কামনা সকলের।