সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষের জন্য পুলিশ বাহিনী ২৪ ঘণ্টাই যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, তাই তাদের প্রতিনিয়ত আত্মত্যাগ করতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরির্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার । তিনি বলেছেন, এ যুদ্ধ অশান্তির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, যারা সমাজের শান্তি-নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২২’ উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন আইজিপি।
অনুষ্ঠানে দেশ ও জনগণের সেবায় ২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়।
বাঙালিকে বীরের জাতি হিসেবে অভিহিত করে আইজিপি একাত্তরে বাঙালির যুদ্ধজয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা প্রমাণ করেছি জাতিগত বীরেরা কী করতে পারে। যখনই সুযোগ পেয়েছে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে আমরা হিরো।’
পুলিশ মেমোরিয়াল ডে এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল দশটায় মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানানো হয়।
আইজিপি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উদযাপিত হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় আজ আবার একত্রিত হয়েছি আমরা। ২০২১ সালে আমরা ৩৪৬ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি, এর মধ্যে ১৩৮ জনকে কর্তব্যরত অবস্থায় হারিয়েছি।
শান্তির সময়েও পুলিশ যুদ্ধে লিপ্ত থাকে উল্লেখ করে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এ যুদ্ধ অশান্তির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, যারা সমাজের শান্তি-নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে। আমরা ২৪ ঘণ্টা এ যুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত। আমরা যেহেতু প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করছি, সেজন্য আমরা প্রতি বছরই আত্মত্যাগ করছি।’
কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের অবদানের কথা স্মরণ করে আইজিপি বলেন, ‘তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা, পরিবারের জন্য সববেদনা এ দুই লাইন পর্যাপ্ত নয়। আমরা আমাদের সহকর্মী হারিয়েছি, প্রিয় মুখ হারিয়েছে পরিবার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি হুমকির মুখে। এর বিরাট একটা অনুরণন রয়েছে। সেই পরিবারটিকে কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা তারাই জানে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ মহিমান্বিত দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে থাকি। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে বিপন্ন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’
যেহেতু পুলিশ সদস্যদের সব সময় যুদ্ধাবস্থার মধ্যে থাকতে হয়, তাই প্রফেশনাল সেফটি নিশ্চিতেও চেষ্টা করে যাচ্ছেন জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়। আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকায় একটি ডিভিশনাল হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে।’
পুলিশের কাজের পরিধির কথা উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেটা পুলিশি দায়িত্বের বাইরে পড়ে। তিনি পুলিশের নিজ দায়িত্বের বাইরে ‘ডেভেলপমেন্ট পুলিশিং’ কনসেপ্ট নিয়ে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করা যায় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
আইজিপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মো. মাজহারুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানান। এ সময় একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
বাংলাদেশ পুলিশের সব মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ এবং জেলা ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২২ পালন করা হয়।
পরে পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আইজিপি ও সিনিয়র সচিব মঞ্চ থেকে দর্শক সারিতে নেমে এসে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী সাতজন পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গের হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহার তুলে দেন।
জীবন উৎসর্গকারী বাকি সদস্যদের পরিবারবর্গকে মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ এবং জেলায় সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয় এবং তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১৩৮ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, সহকারী পুলিশ সুপার একজন, ইন্সপেক্টর দশজন, সাব-ইন্সপেক্টর ২৩ জন, সার্জেন্ট একজন, এএসআই ১৯ জন, নায়েক দুজন ও কনস্টেবল ৮১ জন রয়েছেন।