এক দশকে সরকার পরিচালনায় কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে’ দেখার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আবার নৌকাকে বিজয়ী করলে তিনি আরও ‘উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি’ এনে দেবেন, আর এটাই তার নির্বাচনী ওয়াদা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে এই প্রতিশ্রতি দেন গত দশ বছর বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসা এই রাজনীতিবিদ।
‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই ইশতেহারে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত দুই মেয়াদে সরকারের সাফল্য এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগের ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার এসেছে, তার শুরুতেই রয়েছে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থান নিশ্চত করার প্রতিশ্রতি ।
৮০ পৃষ্ঠার ইশতেহারের সংক্ষিপ্ত সার অনুষ্ঠানে পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। নিজের ও দলের পক্ষ থেকে আমাদের যদি কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসী আপনাদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

ভোটারদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করব। জাতির পিতার কাক্সিক্ষত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসা¤প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিত করতে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রæতি দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ‘কথা নয়, কাজে’ বিশ্বাস করে।
‘স্বাধীনতাবিরোধীরা এলে গøানিকর হবে’
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে অনুষ্ঠানের মঞ্চে এসে শেখ হাসিনা প্রথমেই স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ নির্যাতিত নারী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের এবং পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদেরও তিনি স্মরণ করেন।
ইশতেহার ঘোষণা শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ।
বাঙালি জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে রেখে, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে, পারবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে। গৌরবের এই সময়কালে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে তা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ‘গøানিকর’ হবে বলেও মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা। জনগণ ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ব্যালট বিপ্লবের’ মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতাসীন করবে বলে আশা করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা মার্কায় বিজয় অর্জন করবে, এ বিশ্বাস আমাদের আছে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আবার আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করুনআপনারা নৌকায় ভোট দিন। আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করে দেব। এটা আমাদের জাতির কাছে ওয়াদা।
নিজের ব্যক্তিগত কোনো ‘চাওয়া পাওয়া’নেই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “বাবা মা আত্মীয় স্বজনকে হারিয়ে রাজনীতি করছি শুধুমাত্র জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।
এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত জীবন পায়, তাদের জীবন সমৃদ্ধশালী হয়, ক্ষুধা দারিদ্র থেকে বঞ্চনা থেকে তারা মুক্তি পায়। তাদের জীবনটাকে উন্নত করা , এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য , একমাত্র কামনা।

সকাল ১০টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রকাশের অনুষ্ঠান। শুরুতেই আওয়ামী লীগের শাসনমালের উন্নয়ন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন