সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় আগামি ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় আসামীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীর এ দিন ধার্য করেন।
এদিকে কাঠগোড়ায় থাকা মামলার ৩৪জন আসামীর জামিন আবেদন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জামিন বাতিল হওয়া আসামীরা হলেন, সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. আব্দুর রকিব মোল্ল্যা, পৌর মেয়র মো. আক্তারুল ইসলাম, মো. আব্দুল মজিদ, মো. হাসান আলী, ময়না, মো. আব্দুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, এড. মো. আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, মো. আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, ট্রলি শহীদুল, মো. মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, এড. মো. আব্দুস সামাদ, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন।
পলাতক আসামীরা হলেন, আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, মো. আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক, মো. মাহাফুজুর রহমান,
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর, সহকারি এটর্ণি জেনারেল শাহীন মৃধা, সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ, সাবেক পিপি এড. ওসমান গণি, অতিরিক্ত পিপি এড. ফাহিমুল হক কিসলু, সাবেক অতিরিক্ত পিপি এড. আজাহারুল ইসলাম, এড. শহীদুল ইসলাম পিন্টু, এড. কামরুন্নাহার ছবি, এড. অহিদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এড. ফয়জুর রহমান চৌধুরী ফরিদ, ঢাকা জজ কোর্টের এড. আব্দুল গফফার, এড. ওকালত আলী, এড. নাজমুন্নাহার ঝুমুর, এড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহানাজ প্রমুখ।
আসামীপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশ হাইকোর্টের এড. শাহানারা আক্তার বকুল, এড. আব্দুল মজিদ (২), এড. মিজানুর রহমান পিন্টু, এড. এবিএম সেলিম, এড. শিহাব মাসুদ সাচ্চু, এড. কামরুজ্জামান ভুট্টো, এড. অসীম কুমার মন্ডল প্রমুখ।
বুধবার সকাল সোয়া ১১টায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. আব্দুল মজিদ মামলার প্রধান আাসামী বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সকল আস্মাীদের খালাস পাওয়ার স্বপক্ষে বিভিন্ন আইনি ব্যাখা দেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষের বাংলাদেশের অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর ও সহকাাির এটর্ণি জেনারেল সকল আসামীর ১১ টি ধারায় সর্বোচ্চ ২৬ বছর সাজার পক্ষ্যে আইনি ব্যাখা দেন। সবশেষে এড. আব্দুল মজিদ কাঠগোড়ায় থাকা ৩৪ জন আসামীকে রায় এর দিন পর্যন্ত জামিন আবেদন করলে বিচারক তা না’ মঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।
এ ঘটনায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। পেনালকোর্ডের মামলাটি (টিআর-১৫১/১৫) সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন। মামলার শুরু থেকেই ১২জন আসামী পলাতক ছিল। সাক্ষী চলাকালিন চারজন পালিয়ে যান।
কাঠগড়ায় ৩৪জন আসামীর জামিন আবেদন না’মঞ্জুর ও আদেশ এর জন্য আগামি ৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের পেশকার মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
– পত্রদূত নেট।