সুধা,
আজ তোমার বয়স দুই মাস, দিনের হিসেবে ষাট দিন। আজ থেকে দুই মাস আগের ঠিক এই দিনে তুমি কাছে না এসেই চলে গেছো। অথচ তুমি আসবে বলে কত ফুল ফুটেছিল আশার বাগানে, ড্রেসিং টেবিলের পাশে টানানো ক্যালেন্ডারের প্রতিটি পাতায় কত না ছিল অপেক্ষার দাগ, কত ছিল প্রস্তুতি, শুধু তুমি আসবে বলে, তুমি হাসবে বলে। তোমার জন্য কেনা জামা, জুতো, মোজা, মশারি, তোয়ালে, কারো কালো নজর ঠেকাতে কপালের কাজল আরো কত কি! শুধু দোলনাটা কেনা হয়নি। তোমার বড় ভাইয়ের ইচ্ছে ছিলো তোমাকে নিয়ে তার দোলনায় একসাথে আনন্দে দোল খাবে।
সেদিন ভরসন্ধ্যায় তোমার মা হঠাৎ অনুভব করেছিল তোমার নীরবতার কথা, তোমার প্রানহীন অস্তিত্বের শঙ্কায় কি যে অস্থির হয়েছিলো তোমার মা-বাবা, তা কাউকে বোঝাতে পারিনি। হৃদয়হীন নিষ্ঠুর বাস্তবতায় কে কাকে অনুভব করে? তবুও তোমার না এসে চলে যাওয়ার পিছনে কাউকে দায়ী করিনি আমরা। মুহূর্তেই তোমার শূন্যতা নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী তোমার মা, আর তোমার নিথর প্রানহীন দেহকে সাথে নিয়ে আমি তোমার চিরনিদ্রাস্থলে।
তোমার এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে প্রতি মুহূর্তে কষ্ট হয়। হয়তো সৃষ্টিকর্তার নিয়তি কপালে তাঁর অমোঘ বিধিলিপি লিখে দিয়েছে, এটাই স্বান্তনা। আজও তোমার মা অনেক কেঁদেছে, কষ্টের পাথর চেপে আমি কাঁদিনি; নিজে কাঁদলে অন্যের কান্না থামাবে কে?
এতদিনে হয়ত তোমার নরম তুলতুলে গালের অস্তিত্ব আর নেই, তবে অস্তিত্বের অনুভবে আছেো, সন্ধ্যার সন্ধ্যাতারা আর ধ্রুবতারার মত হৃদয়ে দৃশ্যত, আছো সূর্যোদয়ের রক্তিম রাগরেখার মত সমুজ্জ্বল-
“দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল আলোক
তবে তাই হোক,
মৃত্যু যদি কাছে আনে তোমার অমৃতময় লোক,
তবে তাই হোক।”
অনুভূতি প্রকাশে : দেবাশীষ চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী অফিসার, সাতক্ষীরা সদর।