একসময় জলদস্যু কবলিত ছিল দেশের সুন্দরবন। হরহামেশাই তাদের আক্রমণের শিকার হতেন সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন নদী-সাগরে জীবিকার সন্ধানে যাওয়া জেলেরা। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় এখন অনেকটাই দস্যুমুক্ত বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনটি।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জলদস্যু সুন্দরবনে থাকতে পারে। তবে র্যাবের বার্তা জারি আছে বলে সেখানে কেউ প্রভাব বিস্তার করার সাহস পাচ্ছে না। সুন্দরবন অশান্ত করতে পেছন থেকে যেই ‘কলকাঠি’ নাড়বে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হওয়ার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন দেশের এলিট ফোর্সটির প্রধান। আগামী ১ নভেম্বর দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে র্যাব। তাতে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বিজিবি মহাপরিচালক, খুলনার মেয়র, বিভিন্ন আসনের সাংসদসহ অনেকে।
র্যাবের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় সুন্দরবনের জলদস্যুরা বিভিন্ন সময় দলে দলে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। তাদের পুনর্বাসনে সরকার নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে। র্যাবও তাদের পুনর্বাসন-পরবর্তী মনিটরিং করছে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘সরকার এবং আমাদের টাকায় জলদস্যুদের সহযোগিতা করছি। করোনার সময় আমরা কিন্তু আমাদের নিজেদের বেতন থেকে টাকা দিয়ে মানুষকে সহায়তা করেছি। এটা তো সার্ব্ক্ষণিক করছি না। আমাদের সঙ্গীরা এটা করতে পেরে খুব উৎসাহিত, তারা গর্ববোধ করে।’

শিক্ষার মাধ্যমে জলদস্যুরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে তাদের নিয়ে র্যাবের পরিকল্পনার কথা জানান র্যাবের ডিজি। বলেন, ‘যারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরত এসেছে তাদের নিয়ে ‘নৈশ স্কুলে’ শিক্ষার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলব। সাবেক জলদস্যুর সন্তানরা যাতে নিয়মিত স্কুলে যায়, আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। আমরা বলে দিয়েছি যাদের সন্তানরা স্কুলে যাবে, যারা আচরণ ভালো করবে তাদের প্রতি আমাদের সাহায্যের হাত প্রসারিত রাখব। তারা (সন্তানরা) শিক্ষিত হলে তাদের আত্মসম্মান বাড়বে।’
দস্যুমুক্ত হওয়ার পর সুন্দরবনে কোনো দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে চাইলে র্যাবের প্রধান বলেন, ‘আমরা বড় ধরনের কোনো ঘটনার খবর পাইনি। গণমাধ্যমেও এমন কিছু আসেনি। তবে ছোটখাটো কিছু যে হয়নি, সেটা আমরা বলছি না। তারাও (দস্যু) যে চেষ্টা করেনি সেটাও বলছি না। যখনই চেষ্টা করেছে, তখনই আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা তাদের চেষ্টা বাড়তে দিইনি।’
সুন্দরবনে দুটি ক্যাম্প করা হয়েছে জানিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এর মধ্যে একটি সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জে, আরেকটি দুবলারচরে। এখানে (দুবলারচরে) থাকাটা যে কত কঠিন, যে থাকে সে বুঝতে পারবে। ওখানে পানি পর্যন্ত লবণাক্ত। তারা অপেক্ষা করে কখন বৃষ্টি আসবে, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে তারা খাবার পানি হিসেবে পান করে। এখন সুন্দরবন এলাকায় পর্যটকদের সংখ্যাও বেড়েছে।’
সুন্দরবনে নৌ পেট্রোলিং বাড়ানোর জন্য কাজ করছে র্যাব। বাহিনী-প্রধান বলেন, ‘সুন্দরবন এলাকায় আমাদের পেট্রোলিং আছে। আরও বৃদ্ধি করার জন্য আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাব। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কিছু যানবাহন সংগ্রহ করেছি। আরও সংগ্রহ করব। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা চলতে থাকবে।’
বনরক্ষায় পরিবেশ নিয়ে র্যাব সদস্যদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা সরাসরি কোনো প্রশিক্ষণ দিইনি। তবে আমরা বন বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে কাজ করতে করতে অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেছে আমাদের সহকর্মীরা।’
সুন্দরবন ঘিরে নানা অপরাধীচক্রের স্বার্থের বিষয় বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। তাই বাইরে থেকে কেউ সুন্দরবন অশান্ত করতে চেষ্টা করছে কি না জানতে চাইলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের বার্তা আছে বলেই নতুনভাবে এখনো কেউ সাহস করছে না। বার্তা এখনো জারি আছে, ভবিষ্যতেও জারি থাকবে। যেই সুন্দরবন অশান্ত করতে কলকাঠি নাড়বে, তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
র্যাব-প্রধান আরও বলেন, ‘টুরিস্ট গাইড যারা আছে, তাদের মাধ্যমে শুনেছি, সুন্দরবনে পর্যটকদের গমনাগমন বেড়েছে। বন বিভাগ বলছে, এই সময়ে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি হরিণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে বা পাচ্ছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘ছিটেফোঁটা কিছু মানুষ (জলদস্যু) সুন্দরবনে থাকতে পারে। তবে তারা সুন্দরবনে প্রভাব বিস্তার করার সাহস পাবে না। এখানে সে তার পেশা হয়তো ধরে রেখেছে, পালিয়ে আছে- তবে তার সাহস হয় না সুন্দরবনে নামার।’

আগামী ১ নভেম্বর দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্র