স্বাস্থ্য খাতের সফলতাকে আরো বিস্তৃত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেবার মানসিকতা নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শনিবার (১৫ জুন) বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ফাতেমা বেগম রক্তদান কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহবান জানান।
এসময় তথ্য মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোঁড় গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। যার ফলে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩৪ রকমের ঔষধ বিনামূল্যে জনগণকে দিচ্ছে, যেটা এশিয়ার অন্য দেশগুলোর পক্ষে এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি দেশে এখন টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত কোন বিশেষজ্ঞের মস্তিস্ক থেকে বের হয়নি। এসব যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারদের মধ্যে মানুষকে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে একাগ্রতার অভাব আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের দেশের ডাক্তাররা অন্যান্য দেশের ডাক্তারদের চেয়ে অনেক মেধাবী। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষকে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের একাগ্রতা দরকার তার কিছুটা অভাব দেখা যায়।
প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার ব্যাপারে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের এত এত মেধাবী ডাক্তার বের হচ্ছে প্রতি বছর তার পরেও হাজার হাজার মানুষ বিদেশ কেন যাবে? আপনারা সম্মিলিতভাবে সেবা দানের মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে এটি বন্ধ হবে।
তবে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে ডাক্তারদের একক ভূমিকা কোন পরিবর্তন আনতে পারবেনা বলে তিনি বলেন, শুধু ডাক্তারি পরামর্শ একমাত্র বিষয় না, এক্ষেত্রে নার্সিং সেবার ব্যাপার আছে, হাসপাতালের পরিবেশের ব্যাপার আছে। সব ক্ষেত্রেই সবাইকে দায়িত্ববান হতে হবে।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবাকে উন্নত করা গেলে তিন কোটি মানুষকে উন্নত সেবার আওতায় আনা যাবে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কাজ করতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে চার হাজার বেডে উন্নীত করার জন্য কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, চমেক হাসপাতাল বর্তমানে ১২ শত বেডের ধারন ক্ষমতা রাখে অথচ এখানে নিয়মিত রোগি থাকে ৩ হাজারেরও বেশি। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে চমেক হাসপাতালকে ৪ হাজার বেডে উন্নীত করার ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি, অফিসিয়ালি চিঠিও দিয়েছি।
গত দশ বছরে বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, গত দশ বছরে বাংলাদেশের চেহেরাই বদলে গেছে। দশ বছর পর যারা বাংলাদেশে আসছেন তারা এই উন্নয়ন দেখে চমকে উঠছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাতিসংঘের মহাসচিব, ভারতের রাষ্ট্রপতি এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ব্যাপারে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সবাই এই উন্নয়নে খুশি। শুধু খুশি নয় একটা গোষ্ঠি, সিডিপি। গত দশ বছর ধরে বাজেট এলেই সিডিপির দেবপ্রিয় বাবু এসে একই ভাষায় বাজেটের সমালোচনা করেন। আমার কথা হলো বাজেটে যদি ভাল কিছু নাই থাকে তাহলে গত দশ বছরে এত উন্নয়ন হলো কি করে। সিডিপি নাকি গবেষণা করে। সেখানে আদৌ কোন গবেষনা হয় কিনা তা নিয়েই আমার সন্দেহ হয়।
রক্তদানে চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সফলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,পুরো দেশে রেড ক্রিসেন্টের ৯ টি রক্ত কেন্দ্র আছে। তার মধ্যে রক্তদানে চট্টগ্রামের কেন্দ্র হচ্ছে সবার সেরা । প্রতিবছর ঢাকা রেড ক্রিসেন্ট যেখানে বার হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করছে সেখানে চট্টগ্রাম কেন্দ্র বিশ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করছে। চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্টের এই সফলতা সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. শেখ শফিউল আজমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ ছালাম, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটের সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার, ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন তাহের প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মন্ত্রী।