আগামী ২৩ ডিসেম্বর (রবিবার) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় এই তারিখ জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

ভাষণের শুরুতেই সিইসি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ভাষা আন্দোলনে প্রাণ হারানো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচারিত হয়েছে এই ভাষণ। ১৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের এই ভাষণে সিইসি নুরুল হুদা তার ভাষণে তফসিল ঘোষণায় বলেন, সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১২৩ দফা (৩) উপদফা (ক) অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করছি।

সিইসি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ (সোমবার) নভেম্বর। এরপর আগামী ২২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবে নির্বাচন কমিশন। বাছাই শেষে কমিশন যাদের যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবে, তারা ২৯ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। এরপর ২৩ ডিসেম্বর (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে ভোট। সে হিসাবে তফসিল ঘোষণার ঠিক ৪৫ দিন পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের যাবতীয় প্রস্তুতি তুলে ধরেন। ভাষণে সব নাগরিককে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে জনগণের হয়ে সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশের গণতন্ত্রের ধারা এবং উন্নয়নের গতিকে সচল রাখার আহ্বানও জানান তিনি।

সিইসি তার ভাষণে নির্বাচনী আইন ও বিধি সংশোধনের তথ্য তুলে ধরেন, সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণের পর চূড়ান্ত সংসদীয় আসনের তালিকা প্রকাশ করেন। এছাড়া ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকাও তুলে ধরেন তিনি।

সিইসি জানান, নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে ৭ লাখ কর্মকর্তা কাজ করবেন। এছাড়া নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিপুলসংখ্যক নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছয় লাখ সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি সর্বস্তরের জনগণকে নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান। পাশাপাশি প্রতিটি দলকে একে অন্যের প্রতি সহনশীল ও রাজনীতিসুলভ আচরণের অনুরোধ জানান তিনি। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে সিইসি বলেন, এই প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন কখনও প্রতিহিংসা বা সহিংসতায় পরিণত না হয়, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ জানাই।

সিইসি আরও বলেন, ভোটার, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, প্রার্থী, প্রার্থীর সমর্থক এবং এজেন্টরা যেন বিনা কারণে হয়রানির শিকার না হন বা মামলা-মোকদ্দমার মুখে না পড়েন, তার নিশ্চয়তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কঠোর নির্দেশ থাকবে। দলমত নির্বিশেষে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ধর্ম, জাত, বর্ণ ও নারী-পুরুষভেদে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। ভোট শেষে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে অবস্থান করতে পারবেন।

নির্বাচনের সময় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় সব প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে। সবার জন্য অভিন্ন আচরণ ও সমান সুযোগ তৈরির জন্য নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হবে। এসব নিয়ে শিগগরিই পরিপত্র জারি করা হবে।

নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অল্প কিছু আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে অনেকগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহার সফল হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইভিএমের উপকারিতা সম্পর্কে ভোটারদের জানানো হয়েছে। তারা ইভিএম ব্যবহারে উৎসাহ দেখিয়েছে।

সিইসি নুরুল হুদা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ইভিএম ব্যবহার করা গেলে নির্বাচনের গুণগত মান উন্নত হবে এবং সময়, অর্থ ও শ্রমের সাশ্রয় হবে। সে কারণে শহরগুলোর সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা থেকে দ্বৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় বেছে নেওয়া অল্প কয়েকটিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হবে।

ইভিএম ব্যবহার ছাড়াও প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে কমিশনের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং নির্বাচনের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি আদান-প্রদান পদ্ধতি সংক্রান্ত সফটওয়্যার ও প্রোগ্রাম আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। সরাসরি অথবা অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধানও রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতটি করণীয় নির্ধারণ করার কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, ২০১৭ সালে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করেছিলাম। সংলাপের মাধ্যমে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নারীনেত্রী সংগঠনের কাছে কর্মপরিকল্পনাটি তুলে ধরেছিলাম। তাদের পরামর্শ এবং সুপারিশ বিচার বিশ্লেষণের পর করণীয় বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেমন— কিছু আইন ও বিধি সংশোধন করা হয়েছে, সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের বাছাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ৭৫টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সক্ষমতা অর্জন প্রশিক্ষণ কমসূচি চলছে এবং প্রথমবারের মতো পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, এরই মধ্যে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কমিশনাররা সংবিধানের আলোকে সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করার শপথ নিয়েছেন। নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনা ও ছাপানোর কাজ প্রায় শেষ। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পারস্পরিক পরামর্শ আদান-প্রদানও করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কমিশনের যাবতীয় প্রস্তুতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সূত্রঃ ৭১ নিউজ ডটকম।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন