সাতক্ষীরার রাজনীতির আকাশ থেকে খসে পড়লো বিপ্লবী এক নক্ষত্র। সারা জীবন লোভ মোহের ঊর্দ্ধে থেকে যিনি কাজ করেছেন মানুষের জন্য সেই মানব দরদি মানুষটি আজ আমাদের মাঝে নেই ভাবতেই বুকের ভিতর কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো। বলছি কাজী সাঈদুর রহমান সাঈদের কথা। অন্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে যিনি লড়েছেন মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত। দারিদ্রের সাথে লড়াই করেছেন। সেবা করেছেন মানুষকে। গরীব অসহায় মানুষের মাঝে দুহাতে বিলিয়েছেন সাধ্যমত সাহায্য।
প্রতি ঈদে দেখেছি সাঈদ ভাই, সেমাই, চিনি, সাবান কিনে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে বিলিয়েছেন। শহরের অসহায় বস্তিবাসির সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য বই, খাতা, কলম কিনে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনায় উদ্ভাসিত ছিলো তার হৃদয়। উদারতায় তার মনটা ছিলো কুসুম কোমল। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প তার আদর্শকে স্পর্শ করতে পারেনি। ভূমিহীন আন্দোলনে তার অবদান অনেক। জেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি আন্দোলন, লড়াই, সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। প্রশাসন কথা না শুনলে তার একটা স্বভাব ছিলো, মনের ক্ষোভে স্বেচ্ছাই কারাবরণ করা। কোনো ইস্যুতে চলমান আন্দোলনে জনতার দাবি না মানা পর্যন্ত তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য স্থির প্রতীজ্ঞাবদ্ধ থাকতেন। অসহায় মানুষের আর্তনাদ তার কান পর্যন্ত পৌছালে তিনি ঘরে বসে থাকতেন না। ছুটে আসতেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে। সাংবাদিকদের সাথে আলাপ আলোচনা করে উপায় খুজে বের করতেন।
দৈনিক পত্রদূত অফিসে তার যাতায়াত ছিলো অবারিত। যত রাত হোক দৈনিক পত্রদূত অফিসে তিনি আসবেনই। তিনি কয়েক মাস আগে পর্যন্ত ইটাগাছা পূর্বপাড়ার ভাড়া বাসাটি ছেড়ে কামালনগরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ইটাগাছায় থাকাকালে প্রায় প্রতিদিনই তার সাথে বাসায় ফিরতাম। অফিসে সাঈদ ভাইকে নিয়ে অনেক আড্ডা হতো। বড় রসিক লোক ছিলেন তিনি। বয়সে আমি তার হাঁটুর সমান না। অথচ তিনি বন্ধুর মত ব্যবহার করতেন সবার সাথে। চিরকুমার এ মানুষটির মনে অনেক কষ্ট ছিলো বলে অনুমান করেছিলাম। সাঈদ ভাই বলতেন, কোনো কাজে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলে হবে না, লেগে থাকতে হবে। তাহলে সফলতা আসবেই। আন্দ্লেন কখনো বিফল হয় না। সঠিক নেতৃত্ব দিলে জনগণ নেতা চিনতে ভুল করে না। মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর আদর্শে লালিত কাজী সাঈদুর রহমান সাঈদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েছেন আজীবন। জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামে তার জন্ম। ইংরেজিতে ও বাংলায় সমানভাবে বক্তব্য দিতে পারতেন তিনি। তার বক্তব্যে উঠে আসতো নির্যাতীত, নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিত, অসহায় মানুষের অধিকার আদায়ের কথা। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কুঁড়েঘর প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলেও হাল ছাড়েননি তার স্বপ্নের রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির। সাংবাদি, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সাথে তার ছিলো আত্মার সম্পর্ক। কাজী সাঈদকে চেনে না এমন মানুষ বোধ হয় সাতক্ষীরায় পাওয়া যাবে না। কাজী সাঈদের বক্তব্য শোনেননি এমন মানুষ মনে হয় সাতক্ষীরায় নেই।তিনি প্রায় সময় চিকিৎসা নিতে আসতেন সাতক্ষীরার অবসর প্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ এবাদুল্লাহ সাহেবের চেম্বারে।আজ তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে ডাঃ এবাদুল্লাহ সাহেব ও তাঁর পরিবার ভিষন মর্মাহত হয়েছেন এবং মরহুমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
সেই সবার প্রিয় সাঈদ ভাই আজ আমাদের মাঝে নেই। তিনি বড় অসময়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বুধবার (২২ নভেম্বর ২০১৭) বিকেল ৪টায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।নোনা মাটির পললে সমৃদ্ধ সাতক্ষীরা মানুষের কল্যাণে কাজ করতে যেয়ে অনেক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তিনি। চির শান্তির ঘুমের দেশে চলে গেছেন তিনি। মাটির মমতায় মিশে আছে কাজী সাঈদ। তার আত্মা শান্তিতে থাক।
সুত্রঃ(পত্রদূত নেট)