♣♣♣♣
বসে নেই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (বিপিএম) বার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের পরিবর্তে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে ঘাম ঝরাচ্ছেন তিনি। এমনকি ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়ক গুলোতে পুলিশের নজরদারি বাড়িয়ে বা নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব এড়িয়ে যাননি তিনি।
প্রায় প্রতিদিনই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ঠিকই নিজে ছুটে যাচ্ছেন। পুলিশ প্রধান হিসেবে নিজের দ্বিতীয় এই ঈদেও একই রকম তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। অতীতে বাহিনীর প্রধানদের এভাবে ছুটোছুটি করতে দেখা না গেলেও এক্ষেত্রে রীতিমতো এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই ক্লান্তিহীন পরিশ্রমের পাশাপাশি স্বীয় ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভার আলোকচ্ছটায় সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তাকে নিয়ে চলছে ইতিবাচক আলোচনা।
গেলো ছোট ঈদের কথাই ধরুন না। ওই ঈদের আগে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের যান চলাচল ও যাত্রী পরিবহনসহ সার্বিক বিষয় পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আইজিপি। সেইবার ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
ওইবার এর ঠিক দু’দিন পর রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন করে ঈদ করতে যাওয়া যাত্রীদের আশ্বস্ত করেছিলেন এবং নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে কিছু করণীয়ও বাতলে দিয়েছিলেন। সেইবারও ব্যাপক পুলিশী তৎপরতায় দেশে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার সময়েও এই ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন ছিল।
আর এবার ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসায় দম ফেলারও ফুরসত নেই পুলিশ প্রধানের। ঈদযাত্রা নিরাপদ ও জঞ্জাটমুক্ত করতে আগেভাগেই ‘স্টেপ বাই স্টেপ’ কর্মসূচি গ্রহণ করেন তিনি।
গত শনিবার (১১ আগষ্ট) ঈদুল আজহা উপলক্ষে আয়োজিত পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদুল আজহা উদযাপনের লক্ষে নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।
এরপর সোমবার (১৩ আগষ্ট) পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেই অনুযায়ী দেশব্যাপী যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একনিষ্ঠ, একাগ্র ও দায়িত্বশীল এই মানুষটি। সড়ক ও মহাসড়কে নিরাপদ যানবাহন চলাচল ঠিক রাখতে গত বৃহস্পতিবার (১৬ আগষ্ট) পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি।
পরদিন শুক্রবার (১৭ আগষ্ট) সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ঘরে বসে না থেকে মহাসড়ককেই বেছে নেন। ছুটে যান নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায়। কথা বলেন মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে। জানিয়ে দেন যানজটের আশঙ্কা রয়েছে এমনস্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ যানজট নিরসনে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার কথা।
সেদিন আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, পশুবাহী কোন গাড়ি রাস্তায় আটকানো যাবে না। বিক্রেতারা যেন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্দিষ্ট হাটে গরু বিক্রি করতে পারে সেজন্য প্রতিটি পশুবাহী গাড়িতে স্টিকার লাগানো থাকবে। অন্য কোথাও কেউ জোর করে গাড়ি থামাতে পারবে না। ইজারাদার বা দালালরা যেন কোন হাটে বেপারিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে গরু নামাতে না পরে সে বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
শনিবারও (১৮ আগষ্ট) দিনমান আবদুল্লাহপুর থেকে গোলাপ শাহ (র) মাজার পর্যন্ত একাধিক পয়েন্টে সড়কে যান চলাচল ও ট্রাফিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন।
আবদুল্লাহপুর, এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, জোয়ারসাহারা, কাকলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিজয় স্মরনী, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, শাহবাগ, জিরো পয়েন্ট ও গুলিস্থান এলাকা পরিদর্শনকালে সড়কে বিদ্যমান নানা সমস্যা দেখে সমস্যা সমূহ সমাধানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
পুলিশ প্রধান যথাযথভাবে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আইনের প্রতি জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
এই সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো: আবুল কালাম আজাদ, মুখ্য সচিব মো: নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) সহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।