♣♣♣♣♣
নড়াইলের চিত্রা নদীর দুইপাড়ে দাঁড়িয়ে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করলেন লাখো দর্শক। অনেকেই আবার ট্রলারে চড়ে, পানিতে টিউব নিয়ে ভেসে, গাছের ডালে, বাড়ির ছাদে বসে এই প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন।
শনিবার সকাল থেকেই বাস, নছিমন, করিমন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে নড়াইলসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে দর্শনার্থী আসতে থাকেন সুলতানের শহর নড়াইলে।
এছাড়া ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে সুলতান ভক্তরা অনেক আগেই নড়াইলে চলে আসেন।
সুবিধা মতো নদীর দু’পাড়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন তারা।
তবে বেশি ভীড় দেখা যায় শেখ রাসেল সেতু, এসএম সুলতান সেতু, রূপগঞ্জ বাঁধাঘাট, চরের ঘাট, রূপগঞ্জ খেয়াঘাটে। এছাড়া উন্মুক্ত স্থানে দাঁড়িয়েও নৌকাবাইচ উপভোগ করেন অনেকে।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে শেখ রাসেল সেতু এলাকায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার।
এসময় নড়াইল জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন,সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মেহেদী হাসান (সদর সার্কেল), এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকুসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পরই প্রথম নারীদের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
নারীদের প্রতিযোগিতায় ৪টি নৌকা অংশগ্রহণ করে।
এরপর শুরু হয় পুরুষদের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
পুরুষদের ঢালাই ও কালাই এই দুই গ্রুপের প্রতিযোগিতায় ১৮টি নৌকা অংশগ্রহণ করে।
শেখ রাসেল সেতু থেকে শুরু হয়ে প্রায় চার কিলোমিটার নদীপথ অতিক্রম করে এসএম সুলতান সেতুতে গিয়ে শেষ হয়।
পয়েন্টের ভিত্তিতে পরপর তিনবার প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নড়াইল জেলা প্রশাসক ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
শিল্পী সুলতানের জন্মদিন ১০ আগস্ট হলেও শোকের মাসের কারণে পিছিয়ে দিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা।
এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মিকু জানান, প্রতিবছর শিল্পী সুলতানের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চিত্রা নদীতে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে। নৌকাবাইচসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাকে ধরে রাখতে এবং মানুষকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নির্মল বিনোদন দেওয়ার জন্য প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, প্রতিবছরই অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি শিল্পী সুলতানের শিল্পকর্ম সম্পর্কে মানুষ আরো জানতে পারবে।
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বলেন, প্রতিবছরই বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রা নদীতে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আমরা এভাবেই চিত্রশিল্পীকে স্মরণ করে যাব। পাশাপাশি চিত্রকর্মসহ শিল্পীর স্মৃতিকে ধরে রাখতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা করি।
এদিকে, নড়াইলের সুলতান মঞ্চ চত্বরে চার দিনব্যাপী ‘সুলতান উৎসব’ শনিবার রাতে শেষ হবে।
উৎসবে চিত্রপ্রদর্শনী, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সুলতান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
এসএম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর নড়াইলে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
সূত্রঃপরিবর্ত্তন ডটকম।