আগামীকাল শুক্রবার ১০ মহররম পবিত্র আশুরা। মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকাবহ দিন।
নফল রোজা, নামাজ, জিকির-দোয়া মাহফিলের ভেতর দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনটি পালন করবেন। এটি শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া শোক মিছিলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ( ডিএমপি) পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । তাজিয়া মিছিলে ছুরি-তলোয়ার বহন নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি।
দিনটি মুসলমানদের কাছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারও দিন। শুধু মুসলমান নয়, সকল মানুষের কাছে দিনটি স্মরণীয়। ইতিহাসে বিশাল জায়গা দখল করে আছে পবিত্র আশুরা দিবস। এছাড়া ইবাদত-বন্দেগির জন্যও এ দিবস অতুলনীয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আশুরার রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। তাই এ মাসের ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখা উত্তম। মুসলিম শরিফে আছে- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’
আশুরার দিনের অনেক তাৎপর্যময় ঘটনার একটি হচ্ছে হিজরি ৬১ সনের এই দিনে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহীদ হন। এছাড়া, এই দিনটিতে অনেক ফজিলতময় ঘটনা ঘটেছে।
আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক ধরা হয় পবিত্র আশুরাকে। মুসলমান ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের লোক আশুরাকে সম্মান করে, শ্রদ্ধার চোখে দেখে। ইহুদিরা এই দিনে রোজা রেখে মুসা (আ.) এর অনুসরণ করে। খ্রিস্টানরাও এই দিনকে মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ করে।
আশুরা উপলক্ষে দেশে সরকারি ছুটি থাকে। যদিও এবারের আশুরা হচ্ছে শুক্রবার। এদিন এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাংলাদেশে।
আশুরা উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পুরান ঢাকার হোসেনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের হবে।
এদিন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মসজিদে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেল এই দিনের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
তাজিয়া মিছিলে আগুন-আতশবাজি-ছুরি-তলোয়ার নিষিদ্ধ :
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি না থাকলেও সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তাজিয়া শোক মিছিলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ( ডিএমপি) পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একই সঙ্গে এবার তাজিয়া মিছিলে আগুন-আতশবাজি-ছুরি-তলোয়ার প্রদর্শন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার ১০ মহরমকে ঘিরে বড় তাজিয়া মিছিল হবে। ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিটি শোকমিছিলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবে ডিএমপি।
ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেক দর্শনার্থীর দেহ তল্লাশি করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করানো হবে। পুলিশ ও র্যাবের ডগ স্কোয়াড দিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থল সুইপিং করানো হবে। যে সব রুট দিয়ে শোক মিছিল যাবে সে সব রুটে থাকবে ডিএমপি’র রুফটপ ডিউটি, রোড ব্যারিকেড ব্যবস্থা, গাড়ি ও ফুট পেট্রোলিং। মিছিলের আগে, মাঝে, পাশে ও পিছনে থাকবে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শোক মিছিলের নিরাপত্তায় সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
শিয়া সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে এরই মধ্যে শোক মিছিলের রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত রুট ও সময়সীমা মেনে এবং নির্ধারিত সময়ে তাজিয়া মিছিল শুরু ও শেষ করতে হবে। মিছিলে কোন পাইক অংশগ্রহণ করতে পারবে না। নিশান এর উচ্চতা ১২ ফুট এর বেশি হবে না। শোক মিছিল ও তাজিয়া মিছিলকে ঘিরে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্চাসেবক নিয়োগ করবেন আয়োজকরা। স্বেচ্ছাসেবকরা জ্যাকেট/কটি পরে থাকবে এবং ছবি সংবলিত আইডি কার্ড প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা দেয়া হবে।
রাস্তার মধ্যে বিভিন্ন অলি গলি থেকে তাজিয়া শোক মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না এবার। মিছিলে অংশগ্রহণ করতে হলে ইমামবাড়ায় আসতে হবে। শোক মিছিলে পাঞ্জা মেলানো হয়ে থাকে। পাঞ্জা মেলানোর সময় কোন প্রকার শক্তি প্রদর্শন বা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাবে না। শোক মিছিলে কোন প্রকার ধারালো অস্ত্র, ধাতব পদার্থ, দাহ্য পদার্থ, ব্যাগ, পোটলা, চায়ের ফ্লাক্স, পেসার কুকার, লাঠি, ছোঁড়া, চাকু, তরবারি/ তলোয়ার, বর্শা, ঢাক-ঢোল বাজানো, উচ্চ শব্দে পিএ সেট বাজানো, আগুন ও আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ। পোশাকে ধাতব পদার্থ, ছুরি, চাকু, ব্লেড, তলোয়ার প্রভৃতি ব্যবহার করা যাবে না।