আব্দুল্লাহ এম রুবেল : বাংলাদেশের পেস বোলারদের সবচেয়ে বড় শত্রু চোট। শুধুমাত্র চোটে পড়েই শেষ হয়েছে অনেক পেসারের ক্যারিয়ার। দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও ঝরে পড়েছেন অনেকে। তাদেরই একজন রবিউল ইসলাম শিবলু।

কী দুর্দান্ত শুরুটাই না করেছিলেন তিনি। বিদেশের মাটিতে হার্ড উইকেটে পেসার রবিউল ছিলেন বড় বড় ব্যাটসনম্যানদের কাছে আতঙ্কের এক নাম। হঠাৎই এক চোট। ছিটকে গেলেন দল থেকে। এরপর আর খোঁজ রাখেননি কেউ। চেষ্টা করেছেন বারবার নিজেকে প্রমাণ করার। কিন্তু সেভাবে বড় সুযোগ আর হয়নি তার। বারবার হতাশ হয়েছেন। ভেবেছেন ছেড়েই দেবেন ক্রিকেট, কিন্তু আবারো মনের জোর বাড়িয়েছেন। আবারো লড়াইয়ে নেমেছেন।

নিজেকে ফিট করার জন্য এখন একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই তারকা পেসার। সাতক্ষীরার এই ছেলে নিজেকে ফিট করার জন্য থাকছেন খুলনায়। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে প্রতিদিন বোলিং, জিম আর রানিং করছেন নিজেকে ফিট রাখার জন্য। এই মৌসুমে জাতীয় লিগে খুলনা দলে ফেরাই তার মূল লক্ষ্য।

শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে নিজের অনুশীলনের ফাঁকে রবিউল কথা বলেন নানা বিষয়ে। নিজেকে আবারো ফিরে পাওয়ার বিষয়ে রবিউল বলেন, ‘কিছুদিন আগে জাতীয় লিগের জন্য ফিটনেস টেস্ট হয়েছে, সেখানে বিপ টেস্টে আমার রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয়নি। খুলনা টিমের ২৩ জনের তালিকায় আমি ছিলাম। দলে থাকতে হলে ফিটনেসের বিকল্প নেই। তাই চিন্তা করলাম, সাতক্ষীরাতে নয়, আমি খুলনাতেই থাকব। যেহেতু এখানে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। ইনডোর, জিম ব্যবহার করতে পারছি। অনুশীলন করতে পারছি। এসব চিন্তা করেই আমি গত ২০ দিন ধরে খুলনায় অবস্থান করছি। কিছু করতে হলে আসলে আমাকে চেষ্টা করতেই হবে। কোনো দলের সাথে না থাকলেও নিজে নিজে চেষ্টা করতেছি। আশা করি ভালো ফল পাব।’

জাতীয় দলে ত্রাস ছড়ানো রবিউল কিন্তু এখনই জাতীয় দলের কথা ভাবছেন না। সে পর্যন্ত যেতে হলে যে ধাপগুলো পার করা প্রয়োজন, এখন সেদিকেই লক্ষ্য তার। আপাতত জাতীয় লিগে খুলনা দলে ফেরাটাই তার লক্ষ্য, ‘সর্বশেষ মৌসুমে আমি জাতীয় লিগে একটা ম্যাচ খেলেছিলাম। রাজশাহীতে সেই ম্যাচে আমি ভালোও করেছিলাম। দেখেন, খুলনা দলে সব সময় তারকা ভরপুর। এখানেও জায়গা পেতে হলে অনেক প্রতিযোগিতা হয়। সামনে জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচি। তখন হয়তো অনেকে থাকবেন না। সেই সময়টাতে যদি খুলনাতে খেলতে পারি, সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে নিজেকে ফিরে পাওয়ার। সুযোগটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। আশা করি, একটা সুযোগ পেলে এত কষ্টের একটা ফল সেখানেই দেখাতে পারব।’

মাত্র চার বছর আগে জাতীয় দলে থাকা রবিউলের দল না পাওয়া নিয়ে হতাশাও আছে। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কিংবা বিপিএলেও দল পাননি তিনি। আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘এটা খুবই হতাশার জাতীয় দলের হয়ে মাত্র কিছুদিন আগে খেলা একজন ক্রিকেটার ঢাকা প্রিমিয়ারে দল পাচ্ছে না। আসলে ঢাকা প্রিমিয়ার হচ্ছে নিজেকে চেনানোর সবচেয়ে বড় সুযোগ। সেই সুযোগটাই যখন পাচ্ছিলাম না, মনে হচ্ছিল, ক্রিকেটই ছেড়ে দিব।’ তবে এই চিন্তা বেশিদিন থাকেনি তার মনে। নিজেকে আবারো বুঝিয়েছেন, ক্রিকেটেই তার সব, ‘পরবর্তীতে আমি চিন্তা করলাম, আমি যদি ক্রিকেট ছেড়ে দিই, আমিই হেরে যাব। তাই আমাকে খেলতে হলে কিছু না কিছু করতে হবে। এই জন্যই আমি খুলনাতে চলে আসছি। ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, উন্নতি হচ্ছে।’

নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) সহায়তা চাইলেন রবিউল, ‘একটা সময় পেসারদের নিয়ে বিসিবি আলাদা করে ক্যাম্প করাত। এই ক্যাম্পটা যদি নিয়মিত হয় তাহলে আমাদের মতো পেসারদের অনেক উপকার হতো। আমার কয়েকদিন পর ঢাকায় যাওয়ার কথা। চাম্পাকার সাথে আমার কথা হয়েছে, ও আমাকে বোলিংয়ে সাহায্য করবে বলেছে। এখন বিসিবি যদি এ ধরনের সাহায্য করে তাহলে হয়ত আবারো ভালোভাবে ফিরতে পারব আমি।’

উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সেন্ট্রাল মহিলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং বার বার নির্বাচিত সাতক্ষীরা পৌর কাউন্সিলর জোৎন্সা আরার ছোট ভাই হন শিপলু।

২০১০ সালে টেস্ট ক্রিকেট ইনিন্সে ইংল্যান্ডের লর্ডসে সর্ব প্রথম অভিষেক হয় রবিউল ইসলাম শিবলুর। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯টি টেস্টে ৩৩টি উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে ৩টি ওয়ানডে ম্যাচে ২ উইকেট আছে তার। রবিউল ইসলাম শিপলু তার সফলতার জন্য দেশ বাসীর নিকট দোয়া চেয়েছেন। 





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন