সাতক্ষীরায় ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপনের দাবিতে মাহবুবুর রহমান নামের এক যুবককে অপহরণের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের সংগ্রাম টাওয়ার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে থেকে ওই যুবককে অপহরণের পর মুক্তিপনের ৬ হাজার টাকা দিয়ে দেবহাটার পারুলিয়া এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণের শিকার মাহবুবুর রহামন (২৮) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সৈয়দ আলীপুর গ্রামের সামছুর গাজীর ছেলে। অপহরণের অভিযোগে আটককৃতরা হলো সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর এলাকার মৃত সিদ্দিকুর রহমানের চেলে আবু সাইদ(৩০), একই এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে রাজু(২৭) ও জাকির হোসেনের ছেলে আল আমিন হোসেন ওরফে জুয়েল (২৮), সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের রহমত আলীর ছেলে আজিজুর রহমান বাবু (৩২) এবং শ্যামনগর উপজেলার রামজীবনপুর গ্রামের শেখ গোলাম মোস্তাফার ছেল শেখ ওসমান (২৯)। অপহরণের শিকার মাহবুবুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা কারাগারে আটক এক নিকট আত্মীয়কে দেখতে বুধবার দুপুরের দিকে তিনি সেখানে যান। কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় শ্যামনগরের রামজীবনপুর গ্রামের শেখ ওসমানের সাথে তার দেখা হয়। এসময় ওসমান তাকে চা খাওয়ার কথা বলে পাশের একটি চায়ের দোকানে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনটি মটর সাইকেলে ৭/৮ জন লোক এসে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের পশ্চিম পাশের একটি মাছের ঘেরের বাসায় নিয়ে তাকে নির্যাতন করে বাড়িতে স্ত্রীর কাছে ফোন করে ৩০ হাজার টাকা আনতে বলে। পরে সন্ধ্যায় তাকে সংগ্রাম টাওয়ারে এনে রাখা হয়। সেখানে মুক্তিপনের টাকার দাবিতে তাকে বেদম মারপিট করে তারা। এসময় তাদের ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল থেকে তার স্ত্রী রহিমা খাতুনের কাছে ফোন করে দ্রুত টাকা বিকাশ করে দিতে বলে। না হলে তাকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। এসময় বড় ভাই রশিদ গাজী বিকাশ করে তিন হাজার টাকা তাদেরকে দেয়। অপহরণের শিকার মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন, অপহরণকারিদের কথামত স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম টাওয়ার, খুলনা রোডের মোড় ও বাইপাস সড়কের কাছে গিয়ে না পেয়ে সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেই।

অভিযোগের ভিত্তিতে থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই নজরুল ইসলাম নিজের পরিচয় গোপন রেখে আমার স্বামীকে উদ্ধারের জন্য অপহরণকারিদের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। এক পর্যায় তিনি নিজের মোবাইল থেকে ৩ হাজার টাকা বিকাশ করে অপহরণকারিদের দিয়ে বাকি টাকা পরে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তারা আমার স্বামীকে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়। সেই অনুযায়ী রাত প্রায় ৯টার দিকে তারা আমার স্বামীকে একটি মহেন্দ্র থেকে পারুলিয়া বাস ষ্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে গেলে ভাসুর রশিদ গাজী তাকে উদ্ধার করে সদর থানায় নিয়ে আসেন। সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করি। মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অপহরণকারিদের গ্রেফতারে সাড়াশি অভিযান চালাই। ইতিমধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে ৩০পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এঘটনায় অপহরণের শিকার মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন বাদি হয়ে থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেছেন। অপহরণের শিকার মাহবুবুর রহমানকে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন