বিধি লঙ্ঘন করলে গণমাধ্যম মালিকদের সর্বনিম্ন ৫০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘গণমাধ্যম কর্মী (চাকুরির শর্তাবলী) আইন ২০১৮’ এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (১৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ আইনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, যারা গণমাধ্যমে কাজ করবে তারা শ্রমিক না, গণমাধ্যমকর্মী। শ্রমিক কথাটি থাকবে না। শ্রম আইনে যেখানে শ্রমিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ওখান থেকে বেরিয়ে আসবে। গণমাধ্যম কর্মীর পরিষ্কার সংজ্ঞায়িত করা আছে। তা হল গণমাধ্যমে পূর্ণকালীন সাংবাদিক, কলাকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী, নিবন্ধিত সংবাদ পত্রের মালিকানাধীন ছাপাখানা এবং বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিত কর্মী। ছাপাখানা বলতে সংবাদপত্র রিলেটেড ছাপাখানা।
তিনি জানান, আইনে ওয়েজবোর্ডের কথা বলা হয়েছে। এটা শ্রম আইনের নয়, স্বাধীন ওয়েজবোর্ড। এই ওয়েজবোর্ডে অনলাইন নিউজ পোর্টাল, পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশনসহ সকল গণমাধ্যমকে নিয়ে আসা হয়েছে। এই ওয়েজবোর্ডটি গণমাধ্যম কর্মী ওয়েজবোর্ড নামে পরিচিত হবে।
তিনি বলেন, আইনে ১০ ধারায় নতুন একটি প্রস্তাবনা আছে। তা হল পরিদর্শন কমিটি। পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নিজস্ব চাকরিবিধি থাকবে। ৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো গণমাধ্যমকর্মীর নিয়োগ প্রাপ্তির এক বছর সমাপ্তির পর প্রদেয় ভবিষ্যৎ তহবিলে মাসিক চাঁদা প্রদান আরম্ভ করতে পারবে। যিনি মালিক তিনিও সমানহারে ওখানে কন্ট্রিবিউট করবে।
সপ্তাহে আগে ৪৮ ঘন্টা কর্মঘন্টা থাকলেও এ আইনে করা হয়েছে ৩৬ ঘন্টা। এর বেশি করলে ওভারটাইম দিতে হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ছুটির বিষয়েও এখানে অগ্রগতি আছে। আগে যেটা ১০ দিনের সিএল ছুটি ছিল সেটা এই আইনের ৬ ধারায় ১৫ দিন ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া অর্জিত ছুটি আগে ছিল ৬০ দিন সেটা এখন ১০০ দিন হবে। সেটা ১১ দিনে ১ দিন করে জমা হবে।
তিনি জানান, প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী তাদের চাকরির মেয়াদের ১৮ ভাগের ১ ভাগ পূর্ণ বেতনে অসুস্থতাজনিত ছুটি পাবে। গণমাধ্যমকর্মীরা উৎসব ছুটি পাবে সর্বোচ্চ ১০ দিন। প্রত্যেক নারী গণমাধ্যমকর্মী ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রাপ্ত হবে। প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী ৩ বছর অন্তর ৩০ দিন শ্রান্তি-বিনোদন ছুটি পাবে।
তিনি জানান, ৭ ধারায় চিকিৎসা সুবিধার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা পাবে। ৮ ধারায় নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৯ নম্বর ধারায় বলা আছে, সরকার এ আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে গণমাধ্যমের সাথে জড়িত গণমাধ্যমকর্মী ও কর্মচারীদের ওয়েজ নির্ধারণের জন্য প্রজ্ঞাপনমূলে গণমাধ্যমকর্মী ওয়েজবোর্ড গঠন করবে।
১৪ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ওয়েজের নিম্নতর হার সংশ্লিষ্ট সকল গণমাধ্যম মালিকের উপর অবশ্যই পালনীয় হবে। অর্থাৎ মিনিমাম এমাউন্টটা গণমাধ্যমকর্মীকে দিতে হবে।
সচিব বলেন, ১৬ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিকট কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বকেয়া পাওনা থাকে তাহলে ওই গণমাধ্যমকর্মী স্বয়ং অথবা তার লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি কিংবা মৃত গণমাধ্যমকর্মীর ক্ষেত্রে তার পরিবারের কোনো সদস্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে।
তিনি বলেন, আইনের ১৯ ধারায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনে বর্ণিত ধারা অথবা ধারাসমূহ অথবা এর অধীন প্রণীত বিধি লঙ্ঘন করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯ এর ৩ এ বলা হয়েছে, সরকার এ আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়াসহ যেকোনো পর্যায়ে সরকার প্রদও যেকোনো সুযোগ-সুবিধা বন্ধ অথবা স্থগিত রাখতে পারবে।
সূত্রঃ দৈনিক সাতক্ষীরা ডটকম।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন