ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ। ইউসুফ আব্দুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র প্রফেসর ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা’র উপাচার্য। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। মনোনয়ন প্রাপ্তির প্রসঙ্গে এই শিক্ষাবিদ কথা বলেছেন ….
তিনি বলেন, রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করা, সাধারণ জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজ করা ও দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে ভূমিকা রাখা। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি-দেবহাটা-কালিগঞ্জ (একাংশ) উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ নির্বাচনী আসন। এই আসনটি আমার পূর্বপুরুষদের জন্মস্থান। এই এলাকায় আমার বেড়ে উঠা। আমি খুব কাছ থেকে এই এলাকার জনসাধারণের প্রাত্যহিক জীবন চাক্ষুষ করেছি। ছোটবেলা থেকেই ভাবতাম গরীব-দুঃখী, অভাবী, নিরীহ মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে হবে। এখন শিক্ষকতা পেশায় আছি। বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। ব্যস্ততা বেড়েছে। এর ভিতর দিয়েই যতটুকু পারছি এলাকার নিঃস্ব-অবহেলিত লোকজনের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু একজন ব্যক্তির পক্ষে আপামর জনসাধারণের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব নয়। এই কাজ মূলত একজন জনপ্রতিনিধির। ইতোপূর্বে আমার এলাকায় যাদেরকে আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখেছি তারাও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে তাদের এই চেষ্টা আরো গভীর হতে পারতো। এতে জনগণ তাদের প্রাপ্যটা বুঝে পেত। কিন্তু তা হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, একজন জনপ্রতিনিধি যদি নিজের স্বার্থ পরিত্যাগ করে জনগণের জন্য কাজ করেন, তাহলে জনগনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব সম্ভব। মূলত এই চেতনা থেকে রাজনীতিতে আসা। সাতক্ষীরা-৩ আসনের জনসাধারণের মাঝে থেকে আমি বড় হয়েছি। তারা আমাকে খুব ভালোভাবে চেনেন, আমাকে ভালোবাসেন। আমাকে প্রার্থী হিসেবে পেলে তারাও খুশি হবে। এই আসনের সকল হিন্দু-মুসলমান বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের প্রত্যাশাতেই আমি নির্বাচনী মাঠে আসার সাহস পেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
মনোয়নয় পাওয়া নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল। এখানে কোন একটি আসনের জন্য একাধিক মনোয়ন প্রত্যাশী থাকবেন সেটাই বাস্তব। সবাই স্ব স্ব কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশও করবেন। এভাবে সকলের কর্মকান্ডে কিন্তু দলই লাভবান হয়। সবাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফলতা তুলে ধরছেন, আওয়ামী লীগ এর উন্নয়নের কথা বলছেন। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে আরেকজনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, বিদ্বেষ ছড়ানো কোনক্রমেই কাম্য নয়। দিনশেষে আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, দেশরত্ন শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ কর্মী। কাজেই আমাদের মাঝে এই কাদা ছোড়াছুড়ি কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। আমি নিজে একজন শিক্ষক, একজন শিক্ষকের সন্তান। এ ধরণের কাজ আমার স্বভাববিরুদ্ধ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন তাঁর সাথেই আমি কাজ করবো।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হলে এলাকার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কাজগুলো করতে চান- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মই সাতক্ষীরা তথা সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ। তরুণ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও সৃষ্টিশীল গ্রাম্য অর্থনীতিকে শক্তিশালীকরণের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে কাঙ্খিত মানের শিল্পায়ন সৃষ্টি করার পরিকল্পনা নেওয়া হবে, যেখানে শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে।
উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হলো রাস্তাঘাট তথা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। রাস্তাঘাট পাকাকরণসহ যেসব এলাকায় এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা কাঙ্খিত মানের নয়, সে এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাঘাট নির্মাণ, পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করার পরিকল্পনা প্রাধান্য পাবে।
সাতক্ষীরার সামাজিক সমস্যাগুলোর অন্যতম হলো ভূমিহীন সমস্যা। সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। বঞ্চিত ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ তাঁদের জীবন-মানের উন্নয়নে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একটি আন্তর্জাতিক মানের পলিটেকনিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাসপাতাল এবং বনসম্পদ, মৎস্য ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ প্রতিটি গ্রামে শতভাগ শিক্ষা নিশ্চতকরণের লক্ষ্যে কাজ করবো। আশাশুনি-দেবাহাটার যে সকল গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যায় দিন অতিবাহিত করছেন, সে সকল বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, পানি ও বায়ু দূষণ রোধ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা হবে। পানিসম্পদ রক্ষায় সমন্বিত নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ, নদী খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙন রোধ, বনাঞ্চল ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার ব্যবস্থা এবং আধুনিকায়ন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। সবুজ আশাশুনি-দেবাহাটা-কালিগঞ্জ অঞ্চলে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন ও বাড়িভিত্তিক সবুজায়ন গড়ে তুলতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে উৎসাহিত করবো।
দেবাহাটার (টাকি) সীমান্তবর্তী স্থানে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন শিল্প করার পরিকল্পনা আছে। সাতক্ষীরা থেকে কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু, সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত চারলেনের রাস্তা নির্মাণ এবং ভোমরা স্থলবন্দরের সার্বিক উন্নয়ন হবে আমার কর্মকান্ডের অংশ।