আরিফুল ইসলাম রোহিত: ‘বেতনা নদীর এপারে সুপারিঘাটা আর ওপারে বয়েরবাতান গ্রাম। এপার থেকে ওপারে যেতে মাঝে মাঝে ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে। খেয়া পর হয়ে যেতে হতো। কখনো কখনো খেয়া পাওয়া যেত না। রাতে খেয়া চলাচল করতো না। কিন্তু এই ব্রিজটি নির্মাণের ফলে আমাদের দুর্ভোগ কমে গেছে। মানুষ এখন সহজেই যাতায়াত করতে পারছে।’ সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের সুপারিঘাটা খেয়াঘাটে বেতনা নদীর উপরে নবনির্মিত ব্রিজের পাশে দাড়িয়ে এভাবেই ব্রিজ নির্মাণের পূর্বের দুর্ভোগ সম্পর্কে বলছিলেন ধুলিহর ইউনিয়নের বয়েরবাতান গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, এমপি রবি আমাদের এই যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।
শুধু ধুলিহরের সুপারিঘাটা নয়, বেতনার ওপারের মানুষের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করতে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে ২টি ব্রিজ। যার একটি ধুলিহরের সুপারিঘাটায় অন্যটি ব্রহ্মরাজপুরের মাছখোলায়।
এছাড়া সদর আসনের বিভিন্ন ইউনিয়নে সহজে পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে কালভার্ট ও ড্রেন। এসব ড্রেন ও কালভার্ট স্থাপনের ফলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মানুষ কিছুটা হলেও মুক্তি পেয়েছে জলাবদ্ধতার হাত থেকে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জলাবদ্ধতা কমাতে ও মানুষের চলাচলকে সহজ করতে সদর উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে ৪০টি ছোট ব্রিজ, ১০০টি কালভার্ট ও ৭০টি ইউ ড্রেন। এতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে বেতনার ওপারের মানুষ। তারা সহজেই শহরে আসা-যাওয়া করতে পারছে।
সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যের ডিও অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার ৪শ টাকা ব্যয়ে ৯টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাছখোলা খেয়াঘাট থেকে গোয়ালপোতা বাজার রাস্তায় ১টি, বাঁকাল ব্রিজ থেকে বাগমাড়ি (শাহাডাঙ্গা স্কুলের সামনে) রাস্তায় ৪টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় ধুলিহেরর সুপারিঘাটায় বেতনা নদীর উপর একটি পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া, ইউনিয়ন অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৮শ টাকায় ২টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কালভার্টের মধ্যে মাহমুদপুর বাজার থেকে আবাদের হাট রাস্তায় ডাকপোতা খালের উপর আরসিসি কালভার্ট ১টি, পুরাতন সাতক্ষীরা থেকে মাছখোলা বাজার রাস্তায় ১টি পিএসসি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে বেতনা নদীর উপরে মাছখোলা খেয়াঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
গোয়ালপোতা গ্রামের বাসিন্দা লোকনাথ কর্মকার জানান, আগে বেতনা নদী পার হয়ে শহরে যেতে অনেক দেরী হয়ে যেত। মাঝে মাঝে খেয়া পাওয়া যেত না। দাড়িয়ে থাকতে হতো। যে কারণে দীর্ঘ প্রত্যাশা ছিল এই স্থানে একটি ব্রিজের। সেই ব্রিজ আমরা পেয়েছি। এখন দিনে কিংবা রাতে সহজেই যাতায়াত করতে পারি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর আরও জানায়, সদর আসনের তিনটি ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার। ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার শিয়ালডাঙ্গা কারিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা কাম সাইক্লোন শেল্টার, ফিংড়ি ইউনিয়নের কমিউনিটি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার ও মাছখোলা স্বল্পব্যয়ী প্রাইমারি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার স্থাপন করা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে।
মাছখোলা গ্রামের বাসিন্দা রোমেছো বেগম জানান, মাঝে মাঝে বিভিন্ন দুর্যোগের সময় আমার এই আধাপাকা ঘর নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। এলাকায় একটা সাইক্লোন শেল্টার তৈরি হয়েছে যা আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজন ছিল। যে কোন বড় দুর্যোগ আসলে আমরা সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারি। এই সাইক্লোন শেল্টার করে দেওয়ার জন্যে এমপি রবির নিকট আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।
এদিকে, ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮শ টাকায় উপজেলার ভাড়–খালি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল্লাহ, কয়ারপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রাজ্জাক, ঘোনা গ্রামের মো. আবুল কালাম আজাদ, ধুলিহরের মুক্তিযোদ্ধা শফিক আহমেদ, পৌরসভাস্থ কাটিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. মতিউর রহমানকে বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের দুই তলা নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল আজম জানান, সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সকলের চলাচলকে সহজ করতে, জলাবদ্ধতা নিরসন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে বর্তমান সরকার ও এমপি রবি সকল উদ্যোগ নিয়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিকল্পনা মাফিক ব্রিজ-কালভার্ট, সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করা হয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হবে।

সূত্রঃদৈনিক সূপ্রভাত।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন