স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ৪ বছর পর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অবশেষে কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টার চালু করা হলো। একই সাথে শুরু হলো ডিজিটাল আল্ট্রাসনো মেশিনের কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টার ও ডিজিটাল আল্ট্রাসনো মেশিনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

পরে হাসপাতালের নিজস্ব মিলনায়তন কক্ষে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য।

এ সময় তিনি বলেন, যশোর হলো প্রথম ডিজিটাল জেলা। আবার দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম ক্যাশ কাউন্টার চালু হালো যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। এটা অবশ্যই যশোরবাসীর গর্বের বিষয়। প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন,সরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে মানুষ প্রতারক ও দালালের কবলে পড়ে নিষ্পেষিত হচ্ছেন। এদের প্রতিরোধে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান।

তিনি বলেন, এ হাসপাতালের অধিকাংশ ইয়াং ডাক্তার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে আড্ডায় মেতে থাকেন। এগুলো থেকে আপনাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে যেসব বহিরাগতদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে তাদের নির্দিষ্টভাবে পোশাক তৈরি করতে হবে। কেন না এদের মধ্যে অনেকেই দালালি কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। বকশিস বাণিজ্য বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা সরকার সারাদেশে ১৩ হাজার ৫শ’ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বাতায়ন নামে ২৪ ঘণ্টা একটি হেলথ কল সেন্টার চালুসহ রোগ নির্ণয়ে উপজেলা পর্যায়ে এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, সেমি অটো এনালাইজার, ইএনটি ওপিডি সেট সরবরাহ করা হয়েছে। জেলা হাসপাতালে সিটিস্ক্যান, কালার আল্ট্রাসনো মেশিন, ডিজিটাল এক্সরে মেশিনসহ নানা অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি প্রদান করেছে।

তিনি বলেন, চিকিৎসা বাংলাদেশের মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে এ কথাটি বলে গেছেন। সে কারণেই স্বাস্থ্য খাতের দিকে বেশি নজর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনে রাখবেন চিকিৎসা কিন্তু বাণিজ্য নয়, সেবা। আপনার ডাক্তার। চিকিৎসার জন্য এসে কেউ যেন আপনাদের রোষানলে পড়ে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জনগণ যেন স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত না হয়। মানুষের সেবা দেয়াটা আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বক্তব্য শেষে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য হাসপাতালের জন্য ৬ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দেন। এ টাকার একটি অংশ দিয়ে তিনি হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের জন্য ৬টি এসি কেনার জন্য বলেন। বাকি টাকা জরুরি মালামাল ক্রয়ের নির্দেশনা দেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ, পুলিশ সুপার মঈনুল হক বিপিএম(বার)পিপিএম, যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. গিয়াস উদ্দিন,যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায়, হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্যা, যশোর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম আব্দুর রউফ, ডা. এমদাদুল হক, যশোর পৌরসভার কাউন্সিলার শেখ মোকছিমুল বারী অপু, হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদক এসএম. জাহাঙ্গীর হোসেন খোকন প্রমুখ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, যশোর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আখতারুজ্জামান, ডা. রবিউল ইসলাম, ডা. গোলাম ফারুক, হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রহিম মোড়ল, কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তৌহিদুল ইসলাম, ডা. মনোজ সেনগুপ্ত, প্যাথলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ, গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রীনা ঘোষ, আবাসিক সার্জন ডা. নিলুফার ইসলাম এমিলি, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অহেদুজ্জামান ডিটু, উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক রেহেনা আক্তার, জাগরণী চক্রের নির্বাহী পরিচালক আজাদুল কবির আরজু, সমাজসেবা অফিসার ইতি সেন, জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার একমত পোষণ করে বলেন, দালাল প্রতারক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে।

প্রসঙ্গত, হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলীর মোল্যার লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ হাসপাতালে কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টার স্থাপনের অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি অনুমোদনপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব হাফিজুর রহমান চৌধুরী আদেশপত্রের স্মারক নম্বর-১৯২৯। পত্রে উল্লেখ করা হয়, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এক্স-রে, ইসিজি, ইকো কার্ডিওগ্রাম, আলট্রাসনোগ্রাম, পেয়িং বেড ও কেবিন, বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীর টিকিটের ফি, ব্লাড স্ক্রিনিং ফি, অপারেশন ফিসহ অন্যান্য ইউজার ফি কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। ওই ক্যাশ কাউন্টারের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ নির্মাণ করা হয়। নিজের টাকায় ক্যাশ কাউন্টারের জন্য কম্পিউটার ও প্রিন্টার কিনে দেন ডা. ইয়াকুব আলী। অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারও কেনা হয়।

কিন্তু ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি কর্মজীবন শেষ হওয়ায় ক্যাশ কাউন্টার চালু করতে ব্যর্থ হন তিনি। তারপর ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক হন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ সাহা। তিনিও ক্যাশ কাউন্টার চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু একটি পক্ষের বিরোধিতার কারণে সফল হতে পারেননি।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৬ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. একেএম কামরুল ইসলাম বেনুকে এ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পদে সংযুক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। ১৮ মার্চ তিনি পদে যোগ দেন। এরপর ক্যাশ কাউন্টার চালুর আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ডা. বেনুর নির্দেশে নির্দিষ্ট ভবনের গা থেকে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ লেখাও মুছে ফেলা হয়। এরপর সরকারি অর্থ ইচ্ছামতো হরিলুট হতে থাকে। ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু এ হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন ক্যাশ কাউন্টার চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হলো।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন