রাজশাহী সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলির বিষয়টিকে ভুল ‘বোঝাবুঝি ও অনাকাঙ্তি ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, দুই বাহিনীর মহাপরিচালকদের মধ্যে আলোচনার মধ্যে দিয়েই এর সুরাহা হবে। শুক্রবার জাতীয় প্রেসকাবে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রীর এমন বক্তব্য আসে। তিনি বলেন, পদ্মায় ভারতীয় জেলেদের ইলিশ ধরা নিয়ে জটিলতার পর যে বিএসএফ সদস্যরা এসেছিল, তারা পতাকা বৈঠকের অপো না করে চলে যাওয়ার সময় ‘উভয়পরে মধ্যে গোলাগুলির’ ওই ঘটনা ঘটে এবং তাতে ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনীর একজন সদস্য নিহত হন।
বিজিবির ভাষ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের ভেতরে চারঘাট থানার শাহরিয়ার খাল এলাকায় ঢুকে তিন ভারতীয় জেলে মাছ ধরছিল। মা ইলিশ সংরণ কর্মসূচির আওতায় সেখানে একজন মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিজিবির অভিযান চলছিল। ওই সময় এক ভারতীয় জেলে বিজিবির হাতে আটক হলে বিএসএফের চার সদস্য ‘অনুমতি ছাড়াই’ শূন্য রেখা পেরিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নিতে আসেন।
তখন বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় জেলেকে হস্তান্তরের কথা বললে বিএসএফ তাকে ‘ছিনিয়ে নেওয়ার’ চেষ্টা করে এবং গোলাগুলির সূত্রপাত হয় বলে বিজিবির ভাষ্য। বিএসএফের একটি বিবৃতির বরাত দিয়ে এনডিটিভির খবরে বলা হয়, বিজিবি সদস্যদের গুলিতে ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনীর হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিং নিহত এবং আরও একজন গুলিবিদ্ধ হন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দেখুন এটা একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে একটি চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। হঠাৎ করে এই অ্যাক্সিডেন্টটাৃ আমরা সবাই মর্মাহত হয়েছি।” এ ঘটনাকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, “বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালকের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা মনে করি একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। দুজনের আলাপের মাধ্যমে একটা সুরাহা হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এটা শেষ হবে বলে আমরা মনে করি।” এদিকে আটক ভারতীয় জেলে প্রণব মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি প্রণবের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার ছিড়াচর গ্রামে।
চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার কুণ্ডু জানান, চারঘাট বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে ভারতীয় নাগরিক প্রনব মন্ডলকে আসামি করে বিনা পাসপোর্টে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ও বাংলাদেশ সরকারের মা ইলিশ সংরণ আইন অমান্য করে পদ্মায় ইলিশ ধরার অপরাধে দুটি ধারায় মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তাকে জুডিশিয়াল আদালত-২ এ পাঠানো হয়। আদালতের বিচারক শাহনাজ পারভিন শুনানি শেষে তাকে দুপুরেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে চারঘাট উপজেলা সদরের বিপরীতে পদ্মা ও তার শাখা বড়াল নদের মোহনা শাহরিয়ার খাল নামক এলাকায় বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এলাকাটি ভারতের চর পাইকমারি সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার বাংলাদেশের ভেতরে।
এ ঘটনার পর বিকালে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে রাতে বিজিবির রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, বিএসএফের প থেকে কাছে দাবি করা হয়েছে গোলাগুলিতে তাদের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরো একজন। তবে বিজিবি তা নিশ্চিত নয়। ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, মা ইলিশ সংরণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযানে যায় বিজিবি। এ সময় মাছ ধরার সময় তিনজন জেলেকে আটকের চেষ্টা করা হলে দুজন পালিয়ে যান। তবে প্রণবকে জালসহ আটক করে নদীর এপারে নিয়ে আসা হয়। ঘটনার কিছুণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পিড বোট নিয়ে অনুমতি ছাড়া শূন্য লাইন অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ৬০০ থেকে ৬৫০ গজ ভেতরে নদীর এপারে বিজিবি টহল দলের কাছে আসে এবং আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলে। বিজিবি টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিককে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে তাদের জানায়। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা ভারতীয় নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে নিয়ে মারধর করেন। তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে ল্য করে আনুমানিক ৬ থেকে ৮ রাউন্ড ফায়ার করে। আত্মরার জন্য বিজিবির টহল দল ফাঁকা ফায়ার করে। তখন বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।