শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে সাগরদাঁড়ির মধুমেলা। সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত মেলার মাঠসহ কপোতাক্ষ পাড় ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছেন হাজার হাজার মধুভক্তরা। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের মহানায়ক অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবত্তক মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের ১৯৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে গত ২২ জানুয়ারি মধুমেলা শুরু হয়।
এ মেলা চলবে আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। মহা কবির জন্ম ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়িতে। কবির জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেলা বসেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধুভক্তদের আগমনে মেলা জমজমাট হয়ে উঠেছে। মেলায় আগত হাজারো ভক্তরা মধুকবির স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ পার, বুড়ো কাঠ বাদাম গাছ তলা, জমিদার বাড়ির আম্রকাননসহ মধুপল্লী ঘুরে যেন- তাদের প্রিয় কবিকে খুঁজে ফিরছেন। আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মেলাকে প্রাণবস্তু করে তুলতে মেলার মাঠ জুড়ে বসেছে নানা ধরণের স্টল।
কুঠির শিল্প, কাঠের তৈরি খাট-পালঙ্ক, বাহারী আকারের রাজভোগ, দানাদার, মুড়কি, গজা, জিলাপীসহ ফুসকা, চটপটির স্টল জুড়ে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষনীয়। শিশুদের নাগোরদোলা, ট্রেন ও ডিজিটাল নৌকায় চড়ে আনন্দ উপভোগ করতে দেখা যায়। সব বয়সী মানুষকে ভাজা, চটপটি, সনপাপড়ি ভাপাপিঠা, তন্তুল রুটি কিনে খেতে দেখা যায়।
অন্য দিকে গৃহস্থলির জন্য বটি, দা, মগ কিনতেও দেখা যায় মেলায় আসা গৃহবধূদের। বিশেষ করে রুটি তৈরির পিড়ি-ব্যালনের স্টল গুলোতে মেলায় আগত নারী দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। কিশোর-কিশোরী ও শিশুদের নিকট অন্যতম আকষর্ণীয় ছিল মেলার মাঠে বসানো বাহারী মিষ্টির দোকানের দানাদার। মিষ্টির দোকান গুলোতে বাহারী আকারের রাজভোগ, দানাদার, গজা, জিলাপীসহ বড় বড় রসগোল্লা মিষ্টি কিনতে ক্রেতারা ভিড় করেন।
সারাদেশ থেকে কবির ভক্ত অনুরাগীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মেলায় এসেছেন। শিশু-কিশোররা আনন্দে মেতে উঠে খেলনার স্টল জুড়ে। খেলনা স্টলে কথা হয় বড়েঙ্গা গ্রামের শিশু তাসনিম তাবাচ্ছুম তামিহা, রিফাহ জাহরা ফাবিহা, মূলগ্রামের রেজোয়ান হোসেন, কপোতাক্ষ নদের ওপারের শার্শা গ্রামের পরশ দাস ও অনিকের সঙ্গে।
তারা জানায় পরিবারের সঙ্গে মেলায় এসেছে। সারা দিন মেলা ঘুরে বিকেলে মধুমঞ্চে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে বাড়ি ফিরবে। মেলার মাঠে কথা হয় খলনা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে তিনি বলেন, এবারই প্রথম মধুমেলায় এসেছেন। কপোতাক্ষপার, মধুপল্লী, আ¤্রকানন ঘুরে মুগ্ধ হয়েছেন। মেলা থেকে একটি ভ্যানেটি ব্যাগ কিনেছেন।
মেলার মাঠের পরিবেশ খুবই ভাল বরে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, মধুমঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তার ভাল লেগেছে। কপোতাক্ষের ওপারের শার্শা গ্রামের রমেশ দাস বলেন, তিনি ছেলে পরশ দাসের জন্য বেলুন এবং স্ত্রী রাখি রানীর জন্য বটি, মগসহ নানা ধরণের গৃহস্থলীর জিনিসপত্র কিনেছেন। কেশবপুরের বেলকাটী গ্রাম থেকে এসেছেন সিদ্দিকুর রহমান স্ত্রী শাহানাজ পারভীন ও শিশু মেয়ে তাসমিম সিদ্দিকী রাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে।
তিনি মেয়ের জন্য ক্রিকেট ব্যাড ও বল কেনেন। শাহানাজ পারভীন বলেন, মেয়েকে মেলার মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখান। বাড়ি ফেরার পথে মেয়ের জন্য খেলনা কিনে নিয়ে আসেন। ডুমুরিয়া থেকে এসেছেন নাছিমা খাতুন পরিবার পরিজন নিয়ে। তিনি জানান, মেলার মাঠ ঘুরে তাঁরা খুশি হয়েছেন। বিশেষ করে কপোতাক্ষ পারে স্থাপন করা মধুসূদনের পূর্ণাঙ্গ ম্যুরাল তাদের খুবই পছন্দ হয়েছে।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, এবারের মেলা খুবই পরিচ্ছন্ন। মেলায় মধুভক্ত দর্শনার্থীদের আগমনে সাগরদাঁড়ি মুখরিত হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত মধুভক্তরা মেলায় ঘুরে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছেন। সাগরদাঁড়ির মধুসূদন একাডেমির পরিচালক কবি খসরু পারভেজ বলেন, মেলা উপলক্ষে মধুমঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিষয় ভিত্তিক আলোচনা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
মধুমেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। মেলায় আগত হাজারো ভক্তরা মধুকবির স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের বিদায় ঘাট, বুড়ো কাঠবাদাম গাছ তলা, জমিদার বাড়ি আম্রকাননসহ মধুপল্লী ঘুরে যেন- তাদের প্রিয় কবিকে খুঁজে ফিরছেন।