করোনা যুদ্ধের ফ্রন্টফাইটার পুলিশ সদস্যরা একের পর এক কোভিড-১৯’এ আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই চার পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পর নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যাই সর্বোচ্চ।
ইতোমধ্যেই এখানে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। তবে তাদের সবার শারীরিক অবস্থা ভালো এবং তারা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন।
তাদের দেখভাল করতে জেলা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। সার্বক্ষণিক তারা তাদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি নজরে রাখছেন।
সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন।
এছাড়া রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে খাবার সহায়তা, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী কাজ করতে হচ্ছে তাদের। এসব কাজ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
জেলা পুলিশ আরও জানায়, আক্রান্তদের মাঝে তিনজন পরিদর্শক ও বাকীরা বিভিন্ন পদমর্যাদার। জেলা পুলিশ লাইনসে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তিনজন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু আরও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে তারা নিজেদের ইচ্ছায় জেলা পুলিশ লাইন্সে চলে এসেছেন।
একই সূত্র জানিয়েছে, এএসআই আমিনুল করোনায় আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।
এছাড়া রাজারবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কনস্টেবল মুজিবুর সুস্থ হয়ে এখন সেখানকার পুলিশ লাইন্স স্কুলে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
সূত্র মতে, উপসর্গ দেখা মাত্রই নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সদস্যদের দ্রুত আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতেই এ কাজটি করা হয়েছে।
এমনকি পুলিশ সুপারের গাড়িচালক ও ব্যক্তিগত অর্ডারলি আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকলেও এখনও পর্যন্ত জেলাবাসীর স্বার্থেই নিজের শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রেখে নিয়মিতই অফিস করছেন এসপি। মানবিক সহায়তা থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সামগ্রিক বিষয়াদি কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন।
একই সূত্র জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্সে আইসোলেশনে থাকা সদস্যদের কক্ষে টিভি’র ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা হলেও মূলত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই সেখানে টিভি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পুলিশের হাইকমান্ড।
একটি কক্ষে টিভি দেওয়া হলে সবাই একসঙ্গে গাদাগাদি করে কক্ষে অবস্থান নিবেন। এতে করে প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থার উন্নতির বদলে অবনতি ঘটতে পারে। মূলত এ শঙ্কা থেকেই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তারপরও তাদের বিনোদনের স্বার্থে মোবাইলে যেন তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য জেলা পুলিশের উদ্যোগে তাদের মোবাইলে ডেটা এন্ট্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম।
স্বজনদের কাছে নিজ নিজ গ্রামে রেশন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারকেও (এসপি) তাদের দেখভালের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, করোনায় জেলা পুলিশ সদস্যদের ডিউটি তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আমরা আক্রান্ত সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি। সব সময় আমরা তাদের পাশে রয়েছি।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পরেও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যদের মনোবল ভাঙেনি বরং উদ্দীপনা নিয়েই তারা কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলাবাসীর স্বার্থেই আমরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিবিষ্টমনে কাজ করে যাচ্ছি।