গত ৩ মে পর্যন্ত পরিসংখ্যান বলছে, দেশে করোনক্রান্তের ৮ শতাংশই পুলিশ সদস্য। শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার রোগী। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য ১১৫৩ জন। মৃত‚বরণ করেছে ৫ জন পুলিশ সদস্য। আক্রান্তদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৫ জন। আইসোলেশনে আছেন ৩১৫ জন। কোয়ারান্টিনে আছেন ১ ২৫০ জন।
পরিসংখানটি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই দেশব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি, লকডাউন কার্যকর করা, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তা-সদস্যরা কাজ করে আসছেন। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীদের বাড়ী সহ আশপাশের বাড়ীঘর লকডাউন নিশ্চত করা, আক্রান্তদের বাড়ীতে খাবার, ঔষধ পৌছানো, এমন কি করোনা যুদ্ধে পরাজয় বরণ করা শহীদদের লাশ বহন করা, জানাযা নামাজ পড়ানো এবং সর্বোপরি দাফনের কাজে অগ্রনী সৈনিক বাংলাদেশ পুলিশকে দেখা গেছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পুলিশের কর্মকর্তা-সদস্যরাই এ দায়িত্ব পালন করেছেন। দেখা মেলেনি মৃত্যুবরণকারীর স্বজনদেরকেও। বিষয়টি দেশজুড়ে পত্র-পত্রিকায়, অনলাইন নিউজ পোর্টালে এবং স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার পায়। এতে করে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ভালবাসা বেড়ে যায় পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী।
পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ১১৫৩জন পুলিশ সদস্য করেনা ভাইরাস আক্রান্ত। বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালটির শয্যা ২৫০। সেখানে ভর্তি হয়েছে ৫৮১ জন। তিল ধারণের ঠাই নেই সেখানে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নবনিযুক্ত আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এঁর নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধেশ্বরী কলেজ ও ডিটেকটিভ ষ্ট্যান্ডিং স্কুলকে অস্থায়ী হাসপাতাল ঘোষণা করেছেন। যে কোন সময় বসে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব।
এই হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররাই মোবাইল ফোনে বাড়ীতে থাকা রোগীদেরকে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। এতে করে হিমশিম খাচ্ছে দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাক্তার-নার্সরা। প্রতিদিন এই হাসাপাতালে পরীক্ষা করানোর জন্য পুলিশের ইউনিট ও জেলা থেকে আসছে অসংখ্য পুলিশ সদস্য। রোগীও ভর্তি হচ্ছে প্রতিদিন।
এ অবস্থার অবনতি হলে অর্থাৎ অব্যাহত ভাবে পুলিশ বিভাগের সদস্যরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে পারে। ফলে সেবাদানে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ পুলিশ বিপাকে পড়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের একমাত্র উপায় সাধারণ জনগনকে সচেতন হওয়া। জনগন সেচ্ছায় গৃহেবন্দী হলে বাংলাদেশ পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কাজ বেশ কমে আসবে।
পাশাপাশি সংক্রমনের সংখ্যানুপাত কমানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগকে।
সেবাদানে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদেরকে মানসম্পন্ন মাস্ক, পিপিই সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে। শুধু সরবরাহ করেই বসে থাকলে চলবে না। তাদেরকে প্রশিক্ষণও দিতে হবে। যাতে করে তারা ইকুইপমেন্ট গুলোর ব্যবহার বিধি বুঝতে পারে। এ ছাড়াও বেশি বেশি করে টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে আক্রান্ত একজন সদস্যের দ্বারা আরও সদস্য যেন আক্রান্ত না হতে পারে।
সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এসব বিষয় যদি সরকার না দেখে তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে বিপাকে পড়বে সরকার। সুশৃঙ্খল এ বাহিনীর সদস্যরা যদি অব্যাহতভাবে বেশী সংখ্যায় আক্রান্ত হতে থাকে তবে তাদের মনোবল ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা থেকে যায়।
এখন করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ জীবনবাজী রেখে যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।