সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে পাচার করা সরকারী খাদ্য অধিদপ্তর কাবিখা প্রকল্পের ৮১৭ বস্তা ৪৮ মেট্রিক টন গম কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুরে মেসার্স মনিমুক্তা রাইস মিলের গুদামঘর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ৬জনকে জ্ঞাত ও কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে মামলা দায়ের করেছে দুদক।

ইতোমধ্যে ৩জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মেসার্স মনিমুক্তা রাইচ মিলের মালিক আব্দুল গফ্ফারের ছেলে মনিরুল ইসলাম মনি, উক্ত মিলের ম্যানেজার দেবহাটার আশকারপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম মুকুল ও শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য পবিত্র মন্ডল।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)  জানান, বুধবার গোপন খবর আসে শ্যামনগর থেকে সরকারি গম পাচার করে কালিগঞ্জের একটি রাইচ মিলে রাখা হয়েছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামের  নেতৃত্বে কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসাইন,এস আই তরিকুল ইসলাম  সহ সঙ্গীয় ফোর্স বুধবার বিকেলে উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুর কলোনির মনিমুক্ত রাইচ মিলের গোডাউনে অভিযান চালান। সেখানে বিপুল পরিমান সরকারি সিলযুক্ত বস্তায় গম দেখতে পান।

অভিযান চালিয়ে এসব গম রাতেই কালিগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। দিনভর হিসাব নিকাশ করে ৮১৭ বস্তায় ৪৮ মেট্রিক টন গম নির্ধারণ করা হয়। যার বর্তমানে ৩১ টাকা কেজি দরে বাজার মুল্য ১৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বিপুল পরিমান এই গম উদ্ধারের পর দুদক সংশ্লিষ্ট ঘটনা হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনা অফিসে দায়িত্বরত পরিদর্শক নীল কমল পাল কালিগঞ্জ থানায় আসেন।
তিনি সার্বিক বিষয়ে তদারকির পর গ্রেপ্তার ৩জনসহ আরও ৩জন মোট ৬জনকে জ্ঞাত আসামী করে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে দঃ বিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৮/৪৭১/ ৪৭৭(ক)/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা রুজু করেন। মামলা নং-১১ তারিখ ২৮.০৫.২০২০। মামলাটি তিনি নিজেই তদন্তভার গ্রহণপূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেছেন জানান এই কর্মকর্তা।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জানান, গম উদ্ধারের পরপরই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে মিল মালিকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনি, মিলের ম্যানেজার মুকুলকে বুধবার রাতেই আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য এবং ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকায় বৃহস্পতিবার সকালে শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য পবিত্র কুমার মন্ডলকে তার নিজ বাড়ি পরানপুর থেকে আটক করা হয়।
এদিকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সকালে ঘটনাস্থল ও কালিগঞ্জ থানা পরিদর্শন করে ঘটনার পেছনে কারা আছেন তা ক্ষতিয়ে দেখার তাগিদ দেন।
সম্প্রতি বয়ে যাওয়া কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে শ্যামনগর উপকুলীয় এলাকার কৈখালি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্থ্য বাঁধ ও রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হওয়া বিপুল পরিমান এই গমের কাজ না করেই তা সংস্কার দেখিয়ে ডিও বিক্রি করে গম উত্তোলন করা হয়। বিক্রি করা হয় কালো বাজারে। এরপর ওই গম শ্যামনগর থেকে কালিগঞ্জের মনি মুক্ত রাইচ মিলের গোডাউন ঘরে মজুদ রাখে। সর্বশেষ গোপন খবরের ভিত্তিতে পুলিশের এই সফল অভিযান।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শ্যামনগর উপজেলায় বিভিন্ন বেড়িবাঁধ সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করা হয় গম। কাবিখা প্রকল্পের এই গম কাজ না করেই ভুঁয়া কাজের প্রকল্প দেখিয়ে খাদ্য কর্মকর্তা নুরুল আমিনের সহযোগিতায় গম উত্তোলনের ডিও তৈরী করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, জনৈক জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠভাজন ডিও ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলীর নিকট হতে কালিগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল গফফার ৫০টন গম ক্রয় করেন। তিনি জানান, আমি শ্যামনগরের মোহাম্মাদ আলীর নিকট থেকে ৪৯ টন ২’শ কেজি বিভিন্ন ডিও লেটারের গম ক্রয় করেছি তবে তিনি এ কথা জানালেও কাগজপত্র সরবরাহ করেননি।
এদিকে রাতে শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম সেল ফোনে জানান, আটককৃত গম ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ বরাদ্দ নয়, এটি বিশেষ বরাদ্দ। উপজেলা চেয়ারম্যান বা এমপি সাহেবদের বরাদ্দ হতে পারে। তবে আটক ইউপি সদস্য তাকে বলেছেন, পরানপুর লেবুখালির আতিয়ার শেখের বাড়ি থেকে সাত্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ আসে। ধরা পড়ার পর তিনি জেনেছেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, ইউনিয়নের কিছু হাইব্রীড আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে আছি তাই আমি কোন ঝামেলায় যেতে চাইনা।

এদিকে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার পরিদর্শক এই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা নীল কমল পাল রাতে গণমাধ্যমকে জানান, সরকারি গম কাজ না করেই আত্মসাত করার ঘটনার সামনে পেছনে যারাই আছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সুত্র : পত্রদূত নেট।

 





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন