সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আবারো অসহায় রোকিয়া বেগমের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে।শুধু খোজ নিয়ে ক্ষান্ত নয় সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। অসহায় রোকিয়া বেগম কে নগদ অর্থ, তার নবজাতক পুত্রের জামা কাপড়, পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী উপহার পৌছে দেন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)।
মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) অসহায় রোকিয়া বেগমের বাড়ি মধ্যকাটিয়ায় যান অসহায় রোকেয়া ও তার নবজাতক শিশুর খোঁজ-খবর নিতে ।
পুলিশ সুপার এসময় রোকেয়া খাতুনের সেই নবজাতক বাচ্চাকে দেখতে চান। পরে নবজাতক বাচ্চা কে পুলিশ সুপারের সামনে আনলে পুলিশ সুপার নবজাতক বাচ্চার জন্য কিনে আনা তিন সেট জামাকাপড়, গুড়ো দুধ ও বাচ্চার পরিবারের জন্য নগত অর্থ,বাচ্চার মায়ের জন্য ৩ পিস শাড়ি ১০ কেজি চাল,৫ কেজি ডাল,২ কেজি পিয়াজ, ১ লিটার তেল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি লবণ ও একটি ডেটোল সাবান তুলে দেন।
এসময় পুলিশ সুপার জানতে চান আপনার স্বামী কি করে? এসময় রোকেয়া খাতুন বলেন গাড়িতে হেলপারি করেন। তিনি আরিচা পার হয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওনা দিয়েছেন। এসময় রোকেয়া খাতুন পুলিশ সুপারের উপহার পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন আল্লাহর দুনিয়ায় এখনো ভালো মানুষ আছে বলে কেয়ামত আসেনি। আল্লাহ পাঁক আপনাকে সুস্থ্য রাখুক ও দীর্ঘায়ু দারাজ করুক। এসময় পুলিশ সুপারের সাথে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মহিদুল ইসলাম,ডিবির এসআই হাফিজ,এসআই গোলাম মোস্তফা এসআই মনির, এসআই ফরিদ,এসআই মহাসিন সহ অন্যান্য ডিবির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রাসংঙ্গত : সুপার সাইক্লোন আমফান এর রাতে প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোকিয়া অর্থাভাবে হাসপাতালে আটকা পড়লে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় নিরাপদে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেন।
ডিটেল্স ঘটনা : রোকেয়া বেগম, পিতা জহুর আলী, সং কাটিয়া মাঠপাড়া, থানা জেলা সাতক্ষীরা,সন্তান সম্ভবা মা। সুপার সাইক্লোন আমফান এর রাতে তীব্র ব্যাথা নিয়ে সাতক্ষীরা শহরে একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। অতি দরিদ্র পরিবারে লড়াই সংগ্রামে জীবন চলা। চরম অসহায় অবস্থায় পাষণ্ড স্বামী তাকে ছেড়ে যায় কিছুদিন আগে। নতুন করে সংসার পাতে অমানুষ নিষ্ঠুর স্বামী। প্রতিবেশি একজনের দেয়া মাত্র ৬০০ টাকা জমা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন রোকেয়া। হাসপাতালে তার কোল আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে কণ্যা সন্তান।
কিন্তু রোকেয়ার মুখে হাসি নেই, রাজ্যর দুঃচিন্তা তার মাথায়। হাসপাতালের ২৬ হাজার টাকা বিল দিবে কোথা থেকে। এলাকার কয়েকজন চাঁদা তুলে সামান্য কিছু যোগাড় করেছে। বাকী টাকার জন্য এদিক সেদিক ঘুরে কোন লাভ হয়নি।
এক পর্যায়ে কারো একজনের পরামর্শে একজন সাহায্যকারী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) কে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানান। পরে পুলিশ সুপার বিস্তারিত শুনে জেলা গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর মোঃ মহিদুল ইসলাম কে ঘটনার বিস্তারিত খোঁজ নিতে বলেন।
খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে একটা টিম ও কিছু আর্থিক সহযোগিতা পাঠান সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)।
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ডিবির ওসি মহিদুল ইসলাম আলাপ করে কিছু বিল কমিয়ে ১৯ হাজার করে আনেন। পরে পুলিশ সুপার নিজের পকেটের টাকা দিয়ে হাসপাতালের পুরো বিল পরিশোধ করান।
পরে জেলা পুলিশের এম্বুলেন্স এর মাধ্যমে ঐ অসহায় মা কে তার বাড়িতে পৌছে দেন পুলিশ সুপারের পাঠানো সেই চৌকস পুলিশ টিম।
কিন্তুবিল পরিশোধ করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালো রোগী দূর্বল আছে আরো একদিন থেকে গেলে ভাল হয়।
একথা জানতে পেরে পুলিশ সুপার তাকে(রোগীকে) ঝুঁকি নিতে নিষেধ করেন। পুলিশ সুপার এসময় ক্লিনিক ম্যানেজার কে মোবাইলে বলে দেন আর একদিন থাকুক, পরে যখন রিলিজ দিবে আমরা(পুলিশ সুপার) সহযোগিতা করব।
রবিবার সকালে পুলিশ সুপারের নির্দেশনা মোতাবেক ডিবির ওসি মহিদুল ইসলাম ক্লিনিক ঐ রোগীকে খোজ নিতে বলেন এবং ডিবির ওসির কাছে কিছু টাকা দেন নবজাতক বাচ্চার জন্য জামা কাপড়, কিছু ফলমূল কিনে বাসায় দিয়ে আসার জন্য।পরে ডিবির ওসি মহিদুল ইসলাম জেলা পুলিশের এ্যাম্বুলেন্স যোগে মা ও তার সন্তান কে বাড়িতে পৌছে দেন।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) জানান এম্বুলেন্স, পোশাক সামগ্রী, ফলমুল নিয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখার হেফাজতে অসহায় মাকে তার বাড়িতে নিরাপদে পৌঁছে দিতে পারা ঈদের আগে জেলা পুলিশের জন্য একটা পরিতৃপ্তি।
পুলিশ সুপার তাঁর ফেইজবুকের মাধ্যমে আরো জানান টিম সাতক্ষীরার গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ সহ তার টিমের সবাইকে ধন্যবাদ। পাশাপাশি যারা জেলা পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করে এমন মহৎ কাজে পাশে থাকার সুযোগ দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
করোনা দূর্যোগ আর সুপার সাইক্লোন আমফান এর সময় একজন অসহায় মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পেরে জেলা পুলিশ সাতক্ষীরা আনন্দিত।
পুলিশ সুপার তাঁর ফেইজবুকের মাধ্যমে জানান, পবিত্র ঈদ আমাদের এমন ত্যাগের শিক্ষাই দেয়। সন্ত্রাস মুক্ত মানবিক সাতক্ষীরা গড়া ই আমাদের প্রত্যাশা।