সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি যমজ শিশু সাফিয়া ও মারিয়া। আট মাস বয়সী শিশু দুটির জন্মের পর মাত্র তিন মাস কেনা দুধ খেতে পেরেছিল। এরপর থেকে তাদের ভাগ্যে দুধ জোটেনি। বরং গোলা পানি খাচ্ছিল তারা। মা স্বপ্না বেগম শিশু দুটিকে চালের গুঁড়া বা আটা-ময়দা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতেন। কখনো কখনো কলাপাতা চিবিয়ে খাওয়াতেন!
অসহায় এ শিশু দুটির বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর গ্রামে। তাদের বাবা আনিসুর রহমান মোটরভ্যানচালক। বর্তমানে তারা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছে।
যমজ এ দুই শিশুর মা স্বপ্না বলেন, ‘ওদের বয়স এখন আট মাস। জন্মের তিন মাস পর্যন্ত দুধ কিনে খাইয়েছি। তারপর থেকে টাকা নেই। তাই চালের গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে কয়েক মাস খাইয়েছি। এখন ময়দা ও আটা পানিতে গুলিয়ে খেতে দেই। এভাবে গত ছয় মাস ধরে খাওয়াচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘তিনদিন আগে তাদের জ্বরে মুখ, চোখ ও শরীর ফুলে যায়। এ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতাল থেকে ওষুধপত্র দিচ্ছে। চিকিৎসক বলেছেন, ঠিকমতো ওষুধ খেলে সুস্থ হয়ে যাবে।’
সাফিয়া ও মারিয়া যে ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে সেখানে অসুস্থ নাতনিকে ভর্তি করেছেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে যা দেখেছি- তাতে মনে হলো এই দুই শিশুকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাই বেঁচে আছে। যা খাওয়ানো হয় সেটি কোনো শিশুর খাওয়ার কথা না। কোনো শিশু এসব খায় কি-না আমার জানা নেই। ময়দা গুলিয়ে, আটা গুলিয়ে তাদেরকে তাদের মা খেতে দিচ্ছে। কীভাবে শিশু দুটি বেঁচে আছে একমাত্র আল্লাহ-ই ভালো জানেন।’
শিশু দুটির বাবা আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। মোটরভ্যান চালাই। দুর্ঘটনায় পড়ে গত ৪০ দিন ধরে ভ্যান চালাতে পারিনি। দেড় মাস আগে আমাদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ২০০ গ্রাম দুধ দিয়েছিলেন। সেই দুধ শিশুদের খাইয়েছি। অভাবের কারণে তাদের দুধ কিনে দিতে পারি না। মোটরভ্যানটি এখন অকেজো হয়ে গেছে। শিশু দুটি হাসপাতালে ভর্তি। আমি অসুস্থ হয়ে বাড়িতে আছি। তাদের মা হাসপাতালে। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক অসীম কুমার বলেন, ‘শিশু দুটি জন্মের পর থেকে ভালো দুধ বা পুষ্টিকর কোনো খাবার না পাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের শরীরে প্রোটিন কমে গেছে। আমিষ জাতীয় কোনো খাবার দুই শিশু পায়নি। শুনেছি ময়দা গুলিয়ে পানি খাওয়ায়। আবার জেনেছি কখনো কখনো কলাপাতা চিবিয়েও খাইয়েছে তাদের মা। এভাবে অপুষ্টিজনিত কারণে শিশু দুটির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
অসীম কুমার আরও বলেন, ‘এখন প্রধান কাজ হচ্ছে শিশু দুটিকে ভালো খাবার দেওয়া। ভালো খাবার খেয়ে যদি শরীরে প্রোটিন ফিরে পায় তবে সুস্থ হয়ে যাবে। শিশু দুটির পরিবারে অভাব জেনে আমি ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করেছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফ্রিতে করে দিয়েছি।’
উপরের সংবাদটি ৩১ জুলাই ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে জাতীয় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সংবাদটি চোখে পড়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: শফিকুল ইসলামের। পরে ডিএমপি কমিশনার মো: শফিকুল ইসলাম বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম(বার) জানালে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম(বার) এঁর নির্দেশনা মোতাবেক সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহ্উদ্দিন ও সাতক্ষীরা থানার অফিসার ইনচার্জ মো:আসাদুজ্জামান শুক্রবার সন্ধায় যমজ শিশু ও তার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে দুড়ো দুধ সহ ঈদ সামগ্রী নিয়ে ছুটে যান সাতক্ষীরা সদর হসপিটালেন শিশু ওয়ার্ডে।
হসপিটালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে যমজ শিশুর মায়ের নিকট পুলিশ সুপারের পাঠানো ঈদ সামগ্রী হস্তান্তর করেন সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহ্উদ্দিন।এসময় সাতক্ষীরা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। এসময় পুলিশ সুপারের পাঠানো খাদ্য সামগ্রী পেয়ে শিশু দুটির মা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন আল্লাহ আমার বোবা কান্নার ডাক শুনেছেন সেজন্যই এসপি স্যার আমার জমজ শিশুর জন্য এত খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়েছেন।তিনি এসময় পুলিশ সুপারের প্রতি কৃৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহ্উদ্দিন আপডেট সাতক্ষীরা কে জানান আজ বিকালে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে সংবাদটি সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম(বার)এঁর দৃষ্টিগোচর হয়।
পরে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা হসপিটালে গিয়ে জমজ শিশুর পরিবারের কাছে পুলিশ সুপারের ঈদ উপহার স্বরুপ কমলা ৫ কেজি,আপেল ৫ কেজি,আঙ্গুর ৫ কেজি,মাল্টা,শিশুদের জন্য গুড়ো দুধ এত প্যাকেট ও গুড়ো দুধ এক কৌটা,জমজ কন্যাদের জন্য ঈদের নতুন জামা দুই সেট,জমজ কন্যার মা স্বপ্নার জন্য একটি নতুন শাড়ি ও নগত দশ টাকার টাকা প্রদান করা হয়।