জঙ্গিবাদের মতো ভুল পথে যারা আছে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার ।

জঙ্গিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), ককটেল, বোমা, ওই জর্দার কৌটার মতো জিনিসপত্র দিয়ে তোমরা কাখনও বিজয়ী হতে পারবা না।’

‘তোমরা ফিরে আসো। তোমরা ফিরে না আসলে বেঘোরে প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই অন্ধকার জগত তোমার নিজেকে, পরিবারকে ও রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে পারে।’

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর র‌্যাব সদরদফতরে ৯ জঙ্গির আত্মসমর্পণ উপলক্ষে ‘নব দিগন্তের পথে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ বারবার জঙ্গিবাদে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এর কোনোটাই বাংলাদেশ থেকে সৃষ্টি হয়নি। প্রতিবারই বাইরের দেশ থেকে এসেছে, প্রতিবারই শান্তিপ্রিয় মানুষের সহায়তায় তাদের পরাস্ত করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এখনও যারা এ ধরনের কাজে জড়িত আছে, তাদের প্রতি আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। র‌্যাব, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজমসহ একাধিক টিম তাদের নজরদারিতে রেখেছে। আমাদের গোয়েন্দা কমিউনিটিও এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। হয়তো পরিপূর্ণভাবে সব ঘটনা শুরুতে বিনষ্ট করতে পারিনি। ১০০ ভাগ না হলেও অন্তত ৯০ ভাগেরও বেশি ঘটনা শুরুতেই বিনষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি।’

যারা সমাজের মূলধারায় ফিরে এসেছে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘তোমরা আলোর পথের অভিযাত্রী, এটা দুঃসাহসিক কাজ। এজন্য তোমাদের অভিনন্দন। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার এই ধারা বাংলাদেশই প্রথম চালু করেছে।’

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘হলি আর্টিজানের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের নানা বিধি-নিষেধ দিয়েছে। অনেকে বলেছে বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। পৃথিবীর কোনও দেশ আমাদের তখন সহায়তা করেনি। কিন্তু দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা জঙ্গিবাদকে পরাজিত করেছি। শুধু একবার নয়, জঙ্গিবাদ বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে আমরা বারবার পরাজিত করবো। কোনোক্রমেই দেশে জঙ্গিবাদের কার্যক্রম সফল হতে দেবো না।‘

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যারা আজ সমাজের মূলধারায় ফেরার জন্য আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের এই সমাজ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে নেয়। তুই জঙ্গি-এ কথা বলে যেন তাকে আবারও নেতিবাচক পথের দিকে ঠেলে দেওয়া না হয়।’

তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ একটা আদর্শিক সমস্যা। এটা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা। তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। আজ আত্মসমর্পণ করা ৯ জনের মধ্যে আট জনই তাদের পরিবারের কাছে ফেরত যাবেন। একজনকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে। আইনি কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে ফেরত যাবেন তিনি।’

র‌্যাব প্রধান বলেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা আভিযানিক কার্যক্রম আরও বেগবান করবো, কোথাও জঙ্গিরা টিকে থাকতে পারবে না। তাই যারা পলাতক আছেন, আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করুন।’

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে জেএমবির ৬জন ও আনসার আল ইসলামের তিন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমন করছি তা-ই নয়, পাশাপাশি ডির‍্যাডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে তাদের ভুল পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল তাঁর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন জিরো টলারেন্সের কথা। এটা আমরা কখনো বলি না যে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করেছি। আমরা বলেছি, জঙ্গিবাদকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। অনেক দেশ থেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তোমরা কীভাবে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করছ? আমি বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কখনো জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না বলেই আমরা জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “দেশে যখন একের পর এক জঙ্গির উত্থান হচ্ছিল, আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী দেশের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষকসহ দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ডাক দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সবাই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, মানববন্ধন হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুঁলিয়েছিল—‘জঙ্গিবাদকে সমর্থন করি না’।”

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘পঞ্চগড়ে হিন্দু ইসকন মন্দিরে পুরোহিতকে হত্যা, বৌদ্ধ পুরোহিতকে হত্যা, শিয়া মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ইমামকে গুলির দৃশ্য দেখেছিলাম। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে র‍্যাব এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আজ এই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান তারই প্রতিফলন।

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, পথ হারিয়েছিল, যারা ভুল পথে ভুল আদর্শ বুকে নিয়েছিল, তারা আজ মা-বাবার কাছে ফিরেছে। মা-বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে, যা অনেকদিন পর দেখছি। এজন্য র‍্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। যাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন তাঁদের ট্রাক্টর, কৃষিজ উপকরণ, অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর লক্ষ্য—তারা ভালো থাকুক।’





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন