করোনা আক্রান্ত ধূসর সময়ে পুলিশের বিশেষায়িত এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্বভার গ্রহণ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। প্রাণঘাতী এই মহামারীর ভীত-বিহ্বল সময়টিতে নিজ বাহিনীর সদস্যদের সংক্রমণরোধ থেকে শুরু করে সরকার ঘোষিত লকডাউন নিশ্চিত এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিরাট সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।

বাস্তববাদিতার পাশাপাশি নিজের মেধা, দক্ষতা আর গতিশীল নেতৃত্বের সুনিপণ সমন্বয়ে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করেন। নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় ‘ ‘উত্তীর্ণ’ হয়েছেন।

করোনাপীড়িত সময়ে অচিন্তনীয় ঘরবন্দী অবরুদ্ধতার সময়টিতে সামাজিক দূরত্ব, সঙ্গরোধ নিশ্চিতে সামাজিক সচেতনতাসহ নানাবিধ কর্মকান্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মনোভাবের মাধ্যমেই অতীতের ক্ষিপ্রতায় উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনেও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাব। মিলেছে সাফল্যও। র‌্যাব ফোর্সেসের এই সাফল্য জাতিকে আশান্বিত করেছে।

র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানায়, চৌধুরী আবদুল্লাহ  আল মামুন র‌্যাব ডিজির নেতৃত্বে আসার পর গত এক বছরে তিন শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি সাইবার ওয়ার্ল্ডেও নিয়মিত পেট্রোলিং অব্যাহত রাখে র‌্যাব। এর সুফল হিসেবে জঙ্গিরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। করোনাকালীন গুজব রটনার অভিযোগে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে ২১ জনকে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনধারার থমকে যাওয়া মুহুর্তে অ্যাম্বুল্যান্স, সবজিসহ নিত্যপণ্য পরিবহনের গাড়িতে করে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন নিয়ে মাদক কারবারিদের কৌশলী বাণিজ্যেরও টুঁটি চেপে ধরে র‌্যাব ফোর্সেস। আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয় ১২ হাজারের অধিক মাদক কারবারিকে।

কক্সবাজারের গভীর সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩ লক্ষ পিস ইয়াবা। দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে র‌্যাব। চার মাস ১০ দিনের মাথায় র‌্যাব ওসি প্রদীপ কুমারসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রদানেরও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

একইভাবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভামঞ্চে গ্রেনেড নিক্ষেপকারী সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইকবাল হোসেন ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমকে গ্রেফতার করাও ছিল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে র‌্যাবের সাফল্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

জঙ্গিবাদ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন, উদ্যোগ যুগান্তকারী
জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। এক সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। বুঝতে পারেন নিজেদের ভুল। নিজেরা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিলে উৎসাহিত করে র‌্যাব ফোর্সেস। সুযোগ করে দেয় বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দপ্তরে ‘নব দিগন্তের পথে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নয় জঙ্গি সদস্য ‘আত্মসমর্পণ’ করেন। আত্মসমর্পণকৃত এই নয় জঙ্গিকে ‘ডি-রেডিক্যালাইজেশন’ অ্যান্ড ‘রিহ্যাবিলিটেশন’ এর মাধ্যমে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার জীবন পরিত্যাগ করে শান্তি ও আলোর পথে ফিরিয়ে আনে র‌্যাব।

র‌্যাব ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বের ৯ মাসের মাথায় যুগান্তকারী এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন হয়। র‌্যাব সদর দপ্তর মনে করে, কেবলমাত্র আইনের আওতায় এনেই জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এজন্যই ‘ডি-রেডিক্যালাইজেশন’ অ্যান্ড ‘রিহ্যাবিলিটেশন’ থিউরি প্রয়োগ করছে র‌্যাব।

উগ্রবাদীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ডি-রেডিক্যালাইজেশনের কোন বিকল্প নেই। নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে র‌্যাব জঙ্গিদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।

সেই ‘আত্মসমর্পণ’ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদের উপস্থিতিতে র‌্যাব মহাপরিচালক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের আভিযানিক কার্যক্রম আরও বেগবান করার ঘোষণা দেন।

স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেন, ‘কোথাও জঙ্গিরা টিকে থাকতে পারবে না। তাই যারা পলাতক আছেন, আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করুন।’

জনমানুষের আস্থা-বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে র‌্যাব
গত ১৭ বছরে অনেক সক্ষমতা বেড়েছে র‌্যাবের। উগ্র জঙ্গিবাদ দমন ছাড়াও দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে পুলিশের এই সংস্থাটি। অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের অপতৎপরতা, চোরাচালান, জাল মুদ্রা ও পাসপোর্ট প্রস্তুত এবং অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা রোধে র‌্যাবের ফলপ্রসু অভিযান পরিচালনা করেছে।

শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী চরমপন্থী এবং বনদস্যু দমনেও সফল হয়েছে র‌্যাব। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার সাফল্য ধরে রেখে জলদস্যু আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলেও সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে গত বছরের ১২ নভেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালী, মহেশখালী এবং কুতুবদিয়ায় ১২টি দস্যু বাহিনীর ৩৪ জন দস্যু, ৯৪টি অস্ত্র এবং ২ সহস্রাধিক রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে।

মানব পাচাররোধ, সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী ভূমিকা পালনেও র‌্যাব সাধারণ মানুষের মনেও আস্থার প্রতীক হিসেবে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার মূল্যায়ন করে র‌্যাব সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের ভয়ানক পরিস্থিতির ভেতরেও গত এক বছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে ৬ শতাধিক অস্ত্রসহ প্রায় ৫ শতাধিক অস্ত্রধারী অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন ঘটনা বা অপরাধের ক্ষেত্রেও র‌্যাব দ্রুততম সময়ে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্রিয় রয়েছে। গাজীপুরে একই পরিবারের ৪ জনকে হত্যার ঘটনায় আসামি গ্রেফতার, নরসিংদীর এনজিও কর্মীর হাতের কব্জি কেটে টাকা ছিনতাই মামলার আসামি গ্রেফতার করা ছাড়াও বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অপরাধ, ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে র‌্যাব মানুষের মনে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

এছাড়া গত এক বছরে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধের সাথে জড়িত ৩ শতাধিক অপরাধীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

স্বাস্থ্যখাতের অপরাধীদের দুর্গে হানা
করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য খাতে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভীতিকর এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে করোনা পরীক্ষা নিয়ে ভয়ানক জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনাও ঘটে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় এমন অনিয়ম-দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে সক্রিয় তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব।

হাত গুটিয়ে বসে না থেকে স্বাস্থ্য খাতের অপরাধীদের দুর্গে হানা দিয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, করোনা পরীক্ষায় ভূয়া সনদ প্রদান, অর্থের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা এবং করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদকে গ্রেফতার ছিল করোনাকালীন সময়ে র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন।

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে করোনাসহ বিভিন্ন রোগের টেষ্টিং কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গত এক বছরে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, অবৈধ কিট, ভুয়া রিপোর্ট, লকডাউন অমান্য এবং মাস্ক ব্যবহার না করার ঘটনায় প্রায় ৩ কোটি টাকা জরিমানা এবং ২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

এসব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচনা আর প্রশংসার ডিঙ্গি বেয়েই চলেছে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্যারেডে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা এই বাহিনীটি।

প্রতিহত রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, অপতৎপরতা
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু করে স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র।

চিহ্নিত সেই চক্রটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে র‌্যাব সদর দপ্তর। বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে র‌্যাব ফোর্সেস।

এ সময় নিজের সুর চড়া করে র‌্যাবপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অপরাধী যত শক্তিশালী হউক না কেন ছাড় দেওয়া হবে না।’

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দেশ ও জাতির সুরক্ষায় এই অপশক্তি দমনে র‌্যাবের ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আরও আধুনিক, শক্তিশালী র‌্যাব
র‌্যাবকে সত্যিকারের ‘এলিট ফোর্স’ হিসেবে গড়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সময়োপযোগী করতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সুবিধার আওতায় এনে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন র‌্যাবকে।

সম্প্রতি ওআইভিএস প্রযুক্তিও চলে এসেছে র‌্যাবের হাতে। এর মাধ্যমে অতি দ্রুতসময়ের মধ্যে অপরাধীকে সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

সূত্র জানায়, র‌্যাবকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘ সময় যাবত একাগ্রচিত্তেই কাজ করেছেন পুলিশের বর্তমান আইজি ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। র‌্যাবের বহুমুখী অর্জনের এই কারিগরেরই উত্তরসূরী হয়েছেন বর্তমান ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

নিজের পূর্বসুরীর সময়কার সুখ্যাতি বজায় রেখেই নিজের নেতৃত্বের সময়েও অর্জিত সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান সততা, পেশাদারিত্ব ও যোগ্যতার সঙ্গেই পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইউনিটের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা, র‌্যাবপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

কালের আলো’র সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত এই এলিট ফোর্স বৈশ্বিক পরিমন্ডলেও একটি মডেল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‌্যাব ফোর্সেসের প্রতিটি সদস্যের কর্মদক্ষতা ও অসীম সাহসিকতায় দেশবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। সামনের দিনগুলোতেও সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।’





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন