সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ডিএমপি কমিশনার থাকাকালীন ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার স্থাপন ছিলো একটা অনন্য উদ্যোগ। এর ফলে সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের সম্পর্কের সূচনা হয় বলে উল্লেখ করেছেন বিদায়ী ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়াম, রাজারবাগে সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী আইজিপি এ কথা বলেন।

বক্তব্যের শুরুতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে আইজিপি বলেন, “সাংবাদিকদের সাথে আমার ১২ বছর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করায় গভীর আত্মীক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। চাকরি জীবনের ৩৪ বছরের মধ্যে দীর্ঘ ১২ বছর আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন আমার পথ চলাকে সুগম করেছে। এজন্য আপনাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। মহান রাব্বুল আল আমিনের রহমত এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদন্যতায় আমি ডিএমপি কমিশনার, ডিজি র‌্যাব ও আইজিপির মতো তিনটি জন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার এই পথ চলায় আপনারা আমাকে যে সহায়তা করেছেন, তার জন্য আপনারদের নিকট আমি চিরঋণী। সেই সাথে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।”

আইজিপি বলেন, “ডিএমপি কমিশনার হিসেবে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার তৈরি করে সাংবাদিকগণের সাথে সেতু বন্ধন তৈরির কাজটি করেছি আমি। যার ফলে সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। তাছাড়া র‌্যাবের প্রধান থাকাকালীন সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে ঢাকার মিডিয়া পাড়া খ্যাত কারওয়ান বাজারে একটি অত্যাধুনিক মিডিয়া উইং স্থাপন করেছি। আর ক্র্যাবের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। ক্র্যাবের সুখে-দুঃখে আমি তাঁদের পাশে ছিলাম।”

পেশাগত দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহন করলেও দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও কল্যাণমূলক একটি রাষ্ট্র গঠনে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আইজিপি।

পেশাগত জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিলো, এমন প্রশ্নোত্তরে আইজিপি বলেন, একটি চ্যালেঞ্জের কথা আমি স্মরণ করি, তা হলো ফরমালিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। গণমানুষকে ফরমালিনের হাত থেকে রক্ষা করতে মোবাইল কোর্ট পর্যন্ত পরিচালনা করতে হয়েছে। এটি ছিলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতেও অনেক আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

পুলিশ বাহিনীর কর্ণধার হিসেবে আপনার প্রত্যাশা, সাফল্য ও ব্যর্থতা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সাফল্য এবং ব্যর্থতা না বলে অর্জন বা অর্জন করতে না পারা এভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমার যা অর্জন তা আপনাদের সম্মূখেই আছে। আর যেটুকু পারিনি সেটুকু আমার পরবর্তী উত্তরসূরি অর্জন করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করি।”

সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন( ক্র্যাব) এর সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, ক্রাইম রিপোর্টাসরা পুলিশকে বন্ধু মনে করে। ক্র্যাবের সদস্যদের সাথে বর্তমান আইজিপির সর্ম্পক ছিল মধুর ও বন্ধুত্বপূর্ণ। ক্র্যাবকে নিজের সংগঠন মনে করতেন তিনি। আধুনিক পুলিশের জন্য যা করা প্রয়োজন তিনি সকল কিছুই করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ তার এই কাজের সুফল পেতে শুরু করেছে।

ক্র্যাব সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে কাজ করে থাকে এবং ভবিষ্যতেও করবে উল্লেখ করে আইজিপির সার্বিক মঙ্গল কামনা করেন তিনি। বর্তমান আইজিপির মত নবনিযুক্ত আইজিপিও ক্র্যাবের পাশে থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সিটি এডিটর আবুল খায়ের আইজিপি ও সাংবাদিক পরিবারের সুসর্ম্পকের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বে যখন করোনার আঘাত আসে তখন আইজিপির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পুলিশ জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে বিরল নজির সৃষ্টি করেছে। যা সকল মহলে প্রংসশিত হয়েছে। ড. বেনজীর আহমেদ এর বিশেষ উদ্যোগে জনগণের পুলিশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দক্ষ ও যুগোপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়তে বিদ্যমান পদোন্নতি পদ্ধতি ও পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এনেছেন তা ইচ্ছা করলে কেউ ভাঙতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনকে জলদস্যুর ভয়াবহতা থেকে মুক্ত করে যে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তা আইজিপিরই অবদান। বর্তমান আইজিপি সব সময় আমাদের সহযোগিতা করেছেন ও পাশে ছিলেন। নবনিযুক্ত আইজিপিও সেভাবে আমাদের পাশে থাকবেন।

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণসহ নব নিযুক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, বিপিএম, পিপিএম; ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম(বার); অতিরিক্ত আইজিপি (অ্যাডমিন) মোঃ কামরুল আহসান, বিপিএম (বার) ও র‌্যাব ডিজি এম খুরশীদ হোসেন, বিপিএম(বার), পিপিএম সহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন