মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের জামায়াত দলীয় সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডল মাত্র তিন দিন আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মারা যান।
মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডলের মৃত্যুর খবর শোনার সাথে সাথে নাশকতার আশংকায় সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান পিপিএম এঁর নির্দেশনা মোতাবেক সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ ঐ রাতেই কয়েক শ ফোর্স নিয়ে ছুটে যান বৈকারী এলাকায় আব্দুল খালেক মন্ডলের বাড়ির এলাকায়।বৈকারী ইউনিয়নের প্রত্যেকটি রাস্তা ও মোড়ে মোড়ে মোতায়ন করা হয় সাদা পোষাকের ডিবি পুলিশ।
চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায় আজ বৈকারী তে যে কোন একটা অরাজকতা হতে পারে। ঢাকা-খুলনা-যশোর সহ দেশির বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য জামায়েত ইসরামীর নেতাকর্মী রা এসেছেন তাদের প্রিয় নেতার চেহারা মুবারকটি শেষ বারের মত দেখতে এসেছেন।আবেগ আর উৎকণ্ঠায় ভরা ছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মীরা।
এদিকে বৈকারী এলাকার আ’লীগের নেতাকর্মী রা বার বার ফোন দিতে থাকে পুলিশ কে। এত লোকের সমাবেশ দেখে তারা ভীতসন্ত্রস্ত।জেলার মানুষের মনে অজানা এক ভয় ঢুকে গেলো।মনে হচ্ছিলো সেই ২০১৩-১৪ সালের তান্ডব বুঝি আবারো হবে সাতক্ষীরার বৈকারী ইউনিয়নে।
বৃহম্পতিবার রাত গেলো শুক্রবার বাদ জুম্মা শেষে মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডলের জানাযার নামাজ পড়ানো হয় বৈকারী স্কুল মাঠে। জানাযার মাঠে মোটে না হলেও ৫০ হাজার লোকের উপস্থিতি ছিলো।
এদিকে প্রতিনিয়ত পুলিশ সুপার ওয়ারলেস যোগে খোজ খবর নিতে থাকেন।কয়েক শ পুলিশ অফিসার ও ফোর্স বৃহম্পতিবার ও শুক্রবার রাতে ঐ এলাকয় রাত্রি যাপন করেন।দিনে ও রাতে পর্যায়ক্রমে ঐ এলাকায় নিরাপর্তা টহল দিতে থাকে।এদিকে অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশ সুপার সেখানে ডিএসবির টিম পাঠান আগে থেকে। জানাযার নামাজ শেষে মরহুমের দাফন শেষে পরের দিন পুলিশের সব কয়টি ইউনিটের ফোর্সরা সাতক্ষীরাতে ফিরে আসেন।স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে বৈকারী ইউনিয়নের মানুষ।দীর্ঘ তিন রাত দুই দিন শ্বাসরুদ্ধকর নিরাপর্তা ডিউটি করে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের কয়েকটি ইউনিট।সব শেষে পুলিশ সুপারের দুরদর্শিতায় কেটে গেলো সেই অজানা ভয়।
মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা জেলা কারাগারের সুপার রফিকুল কাদের জানান, যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১০ জুলাই তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত ৭ জুলাই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা- ২ (সাতক্ষীরা সদর) আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে তিনি সাতক্ষীরা জেলা কারাগোরে বন্দী ছিলেন।