সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক ছাড়া আর কোন অপশক্তির কর্তৃত্ব চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন সদর আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু। দুপুরে সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক চত্বরে এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।
এমপি আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, সাতক্ষীরায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় এতদিন দুর্নীতি ও অপশাসন চলেছে তা শীঘ্রই বন্ধ করা হবে। পূর্বে যিনি এই জেলায় অপশাসন কায়েম করেছেন সেই রেশ এখনও কাটেনি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও নিয়োগ বাণিজ্য চলছে। যেসব কর্মকর্তা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একমাত্র যোগ্যরাই চাকরি পাবে, টাকার বিনিময়ে কেউ চাকরি পাবে না। পূর্বের অপশাসকের প্রভাব এত বেশি ছিলো যে জেলা আইনজীবী সমিতিও এর জেরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এটারও সমাধান করা হবে।
এমপি আশু আরও বলেন, নির্বাচনের আগে আমি সাতক্ষীরাবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ভোমরা বন্দরে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, বেকার সমস্যা দূরীকরণ, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা সহ সবগুলো প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করবেন। সংখ্যালঘুদের সন্তানদেরও চাকরির ব্যবস্থা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম, জেলা আ.লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যকে শুভেচ্ছা জানান
নবনির্বাচিত এমপি আশরাফুজ্জামান আশু আরও বলেন, গত ১০ বছরে সাতক্ষীরার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব ধ্বংস করা হয়েছে। পথিমধ্যে দেখতাম কৃষ্ণচূড়া গাছের তলে যখন সাংবাদিকরা বসে থাকতো দেখলে ভালো লাগতো, কিন্তু দু:খের বিষয় আজ আমরা সেটা দেখতে পাইনা। প্রেসক্লাবটি উদ্ধার করে প্রকৃত যারা সাংবাদিক তারা যেন প্রেসক্লাব চালাতে পারে, এজন্য ভোটের মাধ্যমে ও অতি দ্রুত আমি এটার কার্যকার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করবো। সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সটি অচলাবস্থা করে সন্ত্রাসী আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। কার শক্তির বলে বিএনপি নেতা চেম্বার অব কমার্স দখল করে রেখেছেন। তার খুঁটির জোর কোথায়?
তিনি অরও বলেন, ভোমরা স্থল বন্দরে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পকেট কমিটি করে ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করা হয়েছে। সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতিতে যারা নেতৃত্ব দিতে পারে তাদেরকে বসাতে হবে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব যাতে প্রকৃত সাংবাদিকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এবং নেতৃত্ব সাংবাদিকদের হাতেই থাকে আমাদের সবাইকে মিলে সেই কাজ করতে হবে।
এমপি আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, আমরা মহাজোট করে নির্বাচিত হয়েছি, নির্বাচিত হওয়ার আগে যে অঙ্গীকারগুলো আমরা করেছি, সে অঙ্গিকারের মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব দূর করা, জলবদ্ধতা দূর করা, সুন্দরবন বস্ত্রকল পুনরায় চালু করা, ভোমরা বন্দরকে আধুনিকায়ন করা। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা এবং যুব সমাজকে বেকারত্ব মুক্ত করা, সাতক্ষীরা থেকে দুর্নীতি বিতাড়িত করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। গত ৭ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এরজন্য নির্বাচন কমিশন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এমপি বলেন, ৭ তারিখে নির্বাচন হয়েছে আর ৮ তারিখ থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আয়া পদে, পিওন পদে নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমি সংসদ সদস্য আমি জানিনা, আমাকে জানানো হয়নি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি দৃঢ় কন্ঠে বলতে চাই যেসমস্ত কর্মকর্তা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় আগামী ৩০ তারিখের পার্লামেন্ট অধিবেশনে সেখানে গিয়ে আমি তাদের মুখোশ উন্মোচন করবো। আমার নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ ছিল মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাবে, গরীবের সন্তানরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা চাকরি পাবে, আমার সেই ইশতেহারই আমি বাস্তবায়ন করবো। আমি এর আগের এমপিকে বলতে চাই আপনি যে দুর্নীতি অনিয়ম করেছেন কিসের জোরে করেছিলেন আপনাকে আইনের আওতায় এনে আপনাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক আকরাম হোসেন খান বাপ্পি, কোষাধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন, পৌর আ.লীগের সহ-সভাপতি আশরাফুল কবির খোকন, যুগ্ম-সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশি, কামরুল ইসলাম, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কহিনুর ইসলাম, সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বিপুল, কানাইলাল সাহা, সামশুর রহমান সোনা মাষ্টার, আবুল কালাম, প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান মুকুল, প্রধান শিক্ষক মো: এমাদুল ইসলাম, পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি পৌর কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা, সাধারণ সম্পাদক আবু সাদেকসহ সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে যশোর বিমানবন্দর থেকে সড়ক পথে বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা পাটকেলঘাটার কুমিরা এলাকায় পৌঁছালে সড়কেই নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। তারপর বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে সাতক্ষীরা-২ (সদর) উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ ও নেতাকর্মীরা তাকে গণসংবর্ধনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করেন। পথিমধ্যে সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে এলাকাবাসী তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা আশরাফুজ্জামান আশু এমপিকে ভালোবাসা ও অভিনন্দন জানান। চলন্ত অবস্থায় তিনি গাড়িতে বসে হাত নেড়ে এলাকাবাসীর সেই ভালোবাসার জবাব দেন। এমপি আশুর শুভাগমন উপলক্ষে গোটা আসনজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
– পত্রদূত নেট।