নির্বাচনের আগে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রচার করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে। এ কারণে সাইবার জগতেও সতর্ক নজরদারি করবে পুলিশ। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানও শুরু হচ্ছে।

গতকাল রবিবার পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত অর্ধবার্ষিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় (জানুয়ারি-জুন ২০১৮) এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী নির্বাচন ঘিরে গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাই এবারের অপরাধ পর্যালোচনাসভার বেশির ভাগ আলোচনাই ছিল নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। সভায় অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।

একই সঙ্গে সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরানোর কার্যক্রম, জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আসন্ন আশুরা এবং দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদ্‌যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সভায় গত ছয় মাসের অপরাধ বিশ্লেষণে জানানো হয়, এই সময়ে মোট মামলা ও মাদকের মামলা বেড়েছে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে মামলার সংখ্যায় এ পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভায় সব মহানগর পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), ঢাকার পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান ও পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা অরাজকতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হব।’
পুলিশপ্রধান বলেন, পুলিশের পেশাদারি অভিযানের ফলে বর্তমানে দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

আইজিপি বলেন, ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্য ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে তাঁকেও ছাড় দেওয়া হবে না। তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সভায় ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান গত ছয় মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, ছয় মাসে সারা দেশে এক লাখ ১৪ হাজার ১২৪টি মামলা হয়েছে। এ সময় মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান দ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ বেড়েছে। এ কারণে আগের ছয় মাসের তুলনায় মামলা বেড়েছে। তবে ডাকাতি, দস্যুতা, দাঙ্গা, নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, সিঁধেল চুরি, চুরি, সড়ক দুর্ঘটনার মামলার সংখ্যা কমেছে। ছয় মাসে গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে ৭১৪টি। এর মধ্যে পুলিশ ৫৭৩টি গাড়ি উদ্ধার করেছে।

সভায় অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর আগেও শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানো হয়েছে। এ কারণে নির্বাচনের আগে এমন অপচেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। এ আশঙ্কার কারণে আগে থেকেই সতর্কতা বাড়ানো হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র আন্দোলনের চেয়ে বেশি কঠোর হবে পুলিশ। ভুয়া পোস্ট দেওয়া ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে কোন কোন জেলায় নাশকতা বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন আইজিপি। এসপিরা পেশাদার সন্ত্রাসী ও অস্ত্র কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবেন বলে জানান।

সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি) শেখ হিমায়েত হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আবদুস সালামসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন