নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ৪ মাস ১০ দিন পর খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নগর ভবনে এক সাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেয়রের দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি। তবে কেসিসির বিদায়ী মেয়র ও বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন কাউন্সিলর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতায় দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নতুন মেয়র। তিনি বলেন, ন্যায় ও সততার ব্রত নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। সেই পথ থেকে বিচ্যুত না হই-সেজন্য আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজেন। আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে চাই। কোনো লোভ লালসা যেন গ্রাস করতে না পারে সেজন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন নবনির্বাচিত মেয়র।
সহকর্মী কাউন্সিলর ও দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে নতুন মেয়র বলেন, ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কাউন্সিলররা সেবার মান নিয়ে কাজ করবেন। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আসলে এই ৫ বছর আমার থেকে ৩৬ হাত দূরে থাকবেন। নিজের ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টায় থাকলে আমার দলের লোকের সাথেও আমার সম্পর্ক থাকবে না। কেসিসির কাজের ব্যাপারে কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।’
নগর ভবনের নিচতলায় দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বেলা ৩টায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে দলীয় নেতাদের নিয়ে তালুকদর আবদুল খালেক নগর ভবনে আসেন। কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বালা মেয়রকে স্বাগত জানান। পরে নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে মেয়র বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নতুন মেয়র।
কেসিসি’র নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এই দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নতুন মেয়র সিটি করপোরেশনের ২৮ বছরের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তিনি ৮২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে এনেছেন। এরপর তিনি ফুল দিয়ে নতুন মেয়রকে বরণ করে নেন। পরে নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদেরও বরণ করে নেওয়া হয়।
সবার শেষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সিটি মেয়র। শুরুতেই বিদায়ী মেয়র মনিরুজ্জামান মনির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বর্জনের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, এই অযোগ্য লোক ৫টি বছর এই সিটি করপোরেশনকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছেন। এর প্রমাণ আমি দিতে চাই। তিনি পত্রিকায় শুভেচ্ছা দিয়ে বলেছেন, এই সরকার বিরোধী দলের মেয়র বলে আমাকে সাহায্য করে নাই। কিন্তু যোগ্যতা যদি থাকতো তাহলে টাকা এমনিতেই আসতো।
তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগের আগে ৬০০ কোটি নগদ টাকা রেখে এসেছি। সেই টাকার কাজ হয়েছে কিন্তু দৃশ্যমান কিছু হয়নি। আজ জবাবদিহিতা করতে হবে বলেই তিনি এখানে আসলেন না। আগের বার ১৬ কোটি টাকা দেনা নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। এবার কতো দেনা আছে আমি জানি না। এজন্য আমি কর্মকর্তাদের প্রথম থেকেই বলেছি সাবধানে বিল দেবেন।’
জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে নয়া সিটি মেয়র বলেন, ‘৮০০ কোটি টাকা পাশ হওয়ায় অনেকেই উৎফুল্ল হচ্ছেন। কিন্তু এই কাজ যখন শুরু করবো তখন অনেকের মন ভাল থাকবে না। কারণ হলো অনেকেই ড্রেনের জায়গা দখল করে আছেন, অনেকে খাল দখল করে আছেন। এই প্রকল্পে ৮টি খাল রয়েছে। এই ৮টি খালের ওপর যদি সোনার কোনো ভবনও বাধে যেটি অবৈধ, ওই সোনার ভবনও ভেঙ্গে ফেলা হবে। আমি দৃঢতার সাথে বলতে চাই, এসব বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
বক্তব্য শেষে কেসিসির প্যানেল মেয়র-১ আনিসুর রহমান বিশ্বাসের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন মেয়র।
কেসিসি’র প্যানেল মেয়র মোঃ আনিছুর রহমান বিশ্বাষ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ, বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান টুকু, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য শেখ নুরুল হক, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ লোকমান হোসেন মিয়া, কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বালা ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবীর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ ফায়েক উজ্জামান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন, খুলনার জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, খুলনা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. এনায়েত আলী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল হুদাসহ কেসিসি’র কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, কেসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন