জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৮ প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হয়েছেন রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার আবু নাসার উদ্দিন। গত ২২ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আবু নাসার উদ্দিন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে গোয়ালন্দ উপজেলায় যোগদান করেন। এরপূর্বে তিনি ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় ইউএনও হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। ইতোপূর্বে তিনি টাঙ্গাইল ও রাজবাড়ী জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে গাজীপুরে কর্মরত আছেন।

আবু নাসার উদ্দিন ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। মেহেরপুর ও ময়মনসিংহের ফুলপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।

আবু নাসার উদ্দিন ১৯৭৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাফিজুর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মাতা রাবেয়া রহমান আদর্শ গৃহিনী। তিনি কৃতিত্বের সাথে ১৯৯৪ সালে এসএসসি, ১৯৯৬ সালে এইচএসসি, ঢাকার শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (এজি) সম্মান এবং এমএস পাস করেন।

ইউএনও হিসেবে আবু নাসার উদ্দিন ধারাবাহিক কাজের বাইরে গোয়ালন্দ ও কালিহাতীতে অনেক ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করেছেন। সেই কাজগুলোতে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপকার সাধিত হয়েছে তেমনি প্রশংসিত হয়েছে।

তিনি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা অনভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিকট অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ায় উৎসাহ বৃদ্ধি এবং শৃংখলা তৈরির জন্যে ক্রেস্ট, বই-পুস্তক, খেলাধূলার সামগ্রী, স্কুল ড্রেস, বৃক্ষ প্রদান এবং নিয়মিতভাবে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। সেইসাথে দায়িত্বে অবহেলা করা শিক্ষকদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় আমার বিদ্যালয়, আমার অহংকার নামক কর্মসূচি। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা স্বত:স্ফুর্তভাবে এতে অংশ নেন। ইউনিয়নে ইউনিয়নে তার উদ্যোগে হয়েছে চলো যাই গাঁয়ের পথে নামক অনুষ্ঠান।

জনগণ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তর থেকে কি কি সুযোগ সুবিধা পেতে পারে সেই ধারণা পায় অনুষ্ঠান থেকে। এতে সাধারণ মানুষ ও উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের মধ্যে দূরত্ব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

উপজেলায় বাল্যবিবাহ বন্ধে তার অবস্থান ছিল অত্যন্ত কঠোর। উপজেলা প্রশাসন বাল্যবিবাহ বন্ধ এবং বিয়ে আয়োজনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দিয়েছেন কারাদন্ড, আর্থিক জরিমানা। বাল্যবিবাহ বন্ধে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গ্রামে করেছেন সভা সেমিনার।

কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে ২৪ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তাকে সাধুবাদ জানান এবং কালিহাতীকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করেন। নির্বাহী অফিসার আবু নাসার উদ্দিন প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে বিভিন্নস্থানে রাতে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধি, ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন।

এতে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো অনেকেই কাজটি করেছেন। বিরল এই কাজে শীতার্ত মানুষ অত্যন্ত অভিভূত হয়েছেন। খেলাধূলায় বাড়ে বল, মাদক ছেড়ে খেলতে চল স্লোগানে অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোল্ডকাপ ভলিবল টুর্ণামেন্ট। ফলে উপজেলার সর্বত্র খেলাধূলার জোয়ার চলে আসে।

মাদক বিরোধী র‌্যালীতে ইউএনও নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে বিভিন্নস্থানে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় দিবসগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে তিনদিন ব্যাপি বইমেলা ও মার্চে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটিকা প্রদশর্ন অন্যন্য দৃষ্টান্ত।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল স্লোগানে গঠণ করেছেন ভোরের পাখি শরীরচর্চা ক্লাব এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নে করা হয়েছে নতুন একটি সংঘ। পুরো উপজেলার সর্বশেষ সকল তথ্য দিয়ে মোবাইল এ্যাবস তৈরি করেছেন। ফলে দেশে বিদেশের যেকোন প্রান্তের মানুষ উপজেলার তথ্য সহজেই জানতে পারবেন।

বর্ষাকালে উপজেলায় বনায়ন কর্মসূচি সফল করেছেন। উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরকে অন্য যেকোন সময়ের থেকে সাজানো হয়েছে অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে। ফলে দশণার্থীরা হয়েছেন মুগ্ধ। এছাড়া প্রতিনিয়নিতই হচ্ছে জনবান্ধব নানা রকম ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

এসব বিষয় সম্পর্কে গোয়ালন্দের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন নিয়মিত কাজের বাইরে আমাদের নির্বাহী অফিসার আবু নাসার উদ্দিন যেকাজগুলো করছেন সত্যি প্রশংসনীয়। যেগুলো আগে কোনদিন হয়নি, আমিও দেখিনি এবং মানুষ চিন্তা পর্যন্ত করেনি। গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সদস্য নুরুজ্জামান মিয়া বলেন এটি গোয়ালন্দবাসির জন্যে অত্যন্ত আনন্দের খবর। তার ভাল কাজে সবসময় আমাদের সহযোগিতা ছিল ।

এবিষয়ে আবু নাসার উদ্দিন বলেন কোন কাজের স্বীকৃতি যেমন মানুষকে আনন্দিত করে। তেমনি পরবর্তীতে ভাল কাজে আরো উদ্বুদ্ধ করে। আমার ক্ষেত্রেও তাই। বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন আমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। প্রত্যেকটি ভাল কাজেই সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের। প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত সবাইকে সাথে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ মানে পৌঁছাতে চাই।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন