তিন সফল অফিসারের গল্প বলি,
তিন জনই সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ইউএনও মহোদয় হিসাবে খুব সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাম দিক থেকে শুরু করি…..
৩-৪ বৎসর আগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় নির্বাহী অফিসার হিসাবে দায়িত্ব নেন জনাব শাহ্ আবদুল সাদী। দায়িত্ব গ্রহণের ঠিক ১০ দিনের মধ্যে পরিষদের ক্যাম্পাসের ভিতরের সব রাস্তাই পাকা করে দেন তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরিষদরের বিল্ডিং গুলোর চুনকাম ও ডিস্টেম্পার করে নতুন রুপে সাজান তিনি।শুধু তাই নয় বিল্ডিং গুলোকে নদীর নামে নামকরন করেন তিনি।বেশ কয়েকমাস যেতে না যেতে ক্যাম্পাসের শিশু পার্কটির দিকে নজর দেন তিনি।সেখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য দোলনা,মুভিং মই,ঝুল খাওয়া ছাতা সহ অনেক খেলার সামগ্রী স্থাপন করেন তিনি।বৎসর পার হতেই না হতেই তিনি ইউএনও অফিসের নিচের তলায় একটি ডিজিটাল কর্ণার তৈরি করেন।সেখানে খুব উন্নত মানের চেয়ার-টেবিল,মাইক্রফোন,প্রজেক্টর ম্যাশিন সহ ডিজিটাল রুপে ডিজিটাল কর্ণার তৈরি করেন তিনি।
শুধু তাই নয় ক্যাম্পাসের মধ্যে অফিসারদের বিনোদনের জন্য অফিসার্স ক্লাব ও বই পড়ে সময় কাটানোর জন্য একটি লাইব্রেরী স্থাপন করেন।পরিষদের মধ্যে একটি জাগায় বসে ৪৫ দিনের নবজাতক শিশুকে টিকা দিতেন স্বাস্থ্য বিভাগ ও এনজিও কর্মীরা। টিকা দেওয়ার সময় তাদের স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ ছিলনা।কর্মবীর যোগদানের পর তাদের বসার জন্য ও শিশু দের টিকা দেওয়ার জন্য পরিষদ ক্যাম্পাসে তিনি আনন্দ অশ্রু টিকা কেন্দ্র নির্মান করে দেন।সেখানে আজও স্বাস্থ্য কর্মীরা বসে প্রতি রবি বার ও বুধবার নবজাতক শিশুদের টিকা দিয়ে যাচ্ছেন বিনা মুল্যে।তিনি পরিবেশের ভারসম্য রক্ষার জন্য উপজেলা পরিষদের প্রত্যেকটি গাছে গাছে মাটির তৈরি রসের খোপ টানিয়ে দিয়ে পাখিদের বসবাসের জন্য অভায়াশ্রম তৈরি করেছিলেন।উন্নয়রের পাসাপাশি তিনি প্রশাসন চালাতেন খুব দক্ষতার সহিত।সদর উপজেলা থেকে বাল্য বিবাহ কে তিনি লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন।সাথে সাথে মাদক-ইভটিজার দের বিরুদ্ধে তিনি জিহাদ ঘোষনা করেছিলেন।বছর দুই এর মধ্যে তিনি সদর উপজেলার চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন।পরে কর্মবীর স্কলারসীপে উচ্চর ডিগ্রী অর্জন করতে সরকারী ভাবে লন্ডনে গেলেন বিদ্যার্জন করতে।বিদেশের মাটিতে লেখা পড়া করে তিনি সেখানেই সফল হয়েছিলেন।স্কলারশীপ নিয়ে তিনি ফিরে আসেন দেশে।পরে পদন্নোতি পেয়ে খুলনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করেন।খুলনাতে তিনি দক্ষতার সহিত প্রশাসন চালিয়েছেন। পরে খুলনা থেকে উপসচিব পদোন্নতি পেয়ে তিনি সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকার বিভাগের ডিডিএলজি পদে যোগদান করে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন।
এবার আর এক কর্মবীর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। জনাব মোহাম্মদ নূর হোসেন সজল।সাতক্ষীরার সাবেক ইউএনও এবং বর্তমানে মাদারীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কর্মরত আছেন। এক নান্দনিক মনের প্রশাসন ক্যাডারের অফিসার ছিলেন তিনি।রুচিশীলতার অপর নাম মোহাম্মদ নূর হোসেন সজল।যিনি কারো সাথে কালো মুখ করে কথা বলতেন না।সব সময় হাশিখুশি মনে থাকতে পছন্দ করতেন তিনি।উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ইউএনও’র রুমটির ডেকোরেশন করেছেন তিনি তার মনের আল্পনা দিয়ে।রুমের ডেকোরেশন দেখলে মনে হবে এটি সাতক্ষীরার কোন অফিস না।এটি ঢাকা বা বাহিরের দেশের কোন নান্দনিক অফিস।রুমের দেওয়াল বিভিন্ন পাথর দিয়ে ডিজাইন করা,কোথাও কাঠের ডেকোরেশন আবার রুমের উপরের দিকে অসংখ্য লাইনিং ডেকোরেশন করা। নেমপ্লেট থেকে শুরু করে রুমটির দরজা থেকে শুরু করে সব কিছুর মধ্যে একটা আলাদা সৌন্দর্য বিরাজ করছে।যানা গেছে রুমটির ডেকোরেশন তৈরি করতে তিনি ঢাকা /খুলনা থেকে ডিজাইনযুক্ত পাথর ও কাঠের পার্টেক্স বোর্ড গুলো সংগ্রহ করেছিলেন।সব চাইতে বড় অবদান ছিল তার তিনি তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার জনাব Samad Faruq মহোদয়ের নির্দেশনা ও পরামর্শ মোতাবেক সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ভিক্ষুকদের তালিকা প্রস্তুত করে ভিক্ষুকদের মাঝে নগত অর্থ, ভিক্ষুক দের থাকার জন্য গৃহ নির্মান,ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের জন্য ভ্যান,ছাগল,চাল,ঢাল ইত্যাদি উপকরণ দিয়েছিলেন তিনি।শুধু তাই নয় তিনি পবিত্র দুই ঈদে সদর উপজেলার পূনর্বাসিত ভিক্ষুক দের মাঝে সেমাই,চাল,ডাল,চিনি পর্যন্তও বিতরণ করেছিলেন।মুখে হাসি রেখে প্রশাসন চালাতেন তিনি খুব দক্ষতার সহিত।হৃদয়বান অফিসার একবার বল্লী এলাকায় নদীর স্রোতে বাধ ভেঙে যাওয়াতে এবং কিছু বসত বাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে তিনি প্যান্ট গুটিয়ে সোজা পানিতে নেমে শ্রমিকদের নাথে কাঁদা পানি মেখে স্রোতের বাঁধ নির্মান করেছিলেন।সকলের প্রিয় এই নান্দনিক অফিসার একজন সাংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন।মন চাইলেই তিনি শিক্ষক মঞ্জু স্যারের বাসায় গিয়ে গিটার নিয়ে গান শুরু করে দিতেন।খেলা ধুলায়ও অনেক পারদর্শী ছিলেন তিনি।ভালো ল্যাটিম ঘুরাতে পারতেন তিনি।সাতক্ষীরায় কয়েক বৎসর যেতে না যেতেই তিনি পদন্নতি পেয়ে বর্তমানে মাদারীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
সর্বশেষে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ইউএনও হিসাবে যিনি এসেছেন এবং চলতি দায়িত্ব পালন করছেন তিনি হচ্ছেন সদর উপজেলার বিঞ্জ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী অফিসার জনাব তহমিনা খাতুন।
মাত্র কয়েক মাস হলো তিনি এসেছেন।যোগদানের পরপরই তিনি পরিষদের বিল্ডিং গুলোর চুনকাম ও ডিস্টেম্বার করে নতুন রুপ দান করেছেন।পরিষদের ২য় তলার উপর দিয়ে চেয়ারম্যানের অফিসে যাওয়ার রাস্তাটি উন্মুক্ত ছিলো।বর্ষায় পানি পড়তো, ফলে যাতায়াতে সমস্য হতো জনগনের।তিনি যোগদানের পরপরই রাস্তাটি টিন দিয়ে ছেয়ে দিয়েছেন ফলে জনসাধারণের ভোগান্তী কুমেছে।পরিষদরের সব কয়টি অফিসের বারান্দায় কোন গ্রীল বা সিকিউরিটি ছিলো না ফলে আগে নিরাপর্ত্তা না থাকায় স্টার্ফদের মটর সাইকেল গুলো ঘনঘন চুরি হতো।অথচ এখন অফিসের বারান্দা গুলো গ্রীল ও গেট বসাতে আর কোন সাইকেল মটর সাইকেল চুরি হয়না। বাল্য বিবাহের খবর পেলেই তিনি সেখানে দ্রুত ছুটে যান এবং বাল্যবিবাহের হাত থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করেন।পরিষদের প্রত্যেকটি অফিসে একটি করে আবর্জনা ফেলার বাস্কেট দিয়েছেন পরিচ্ছন্ন ও পরিস্কার উপজেলা বির্নিমানের লক্ষে।সব চাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে তিনি ৩০ শে ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর উপজেলার সহকারী রির্টানিং অফিসার হিসাবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন সহ পৌরসভায় তিনি একটি অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিলেন।যার কারনে কোন রকম বিশৃংখলা ছাড়াই সদর উপজেলার সব কয়টি কেন্দ্রে সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।তিনি বর্তমানে সদর উপজেলার সন্মানিত ইউএনও মহোদয় হিসাবে খুব সুনাম ও দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
লেখক :
জিমি,সিটিজেন জার্নাালিস্ট সাতক্ষীরা
নির্বাহী পরিচালক,আপডেট সাতক্ষীরা ডটকম।