রাজধানীতে বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশ। ২০১৬ সালে এই উদ্যোগ নেয়া হলেও মাঝে তা কিছুটা স্থিমিত হয়ে যায়। তবে নতুন করে শুরু করা এই উদ্যোগে রাজধানীর কোনো নাগরিক ডাটাবেজের বাইরে থাকবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া। এই ডাটাবেজ সম্পন্ন হলে নাগরিক সেবার পরিধি যেমন বাড়বে তেমনি কমে আসবে অপরাধ।
শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ ২০১৯’ উদ্বোধনকালে বক্তব্য দেন ডিএমপি কমিশনার।
‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ ২০১৯’ এর স্লোগান হচ্ছে- ‘আপনার তথ্য থানায় জমা দিন, পুলিশকে সহায়তা করুন’; ‘নিজে নিরাপদ থাকুন অন্যকে নিরাপদে রাখুন’; ‘সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এবং অপরাধের হুমকি থেকে এই মহানগরীর মানুষকে সুরক্ষিত রাখুন।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘গত ১৩ জুন পর্যন্ত সিআইএমএস সফটওয়ারে বাড়িওয়ালা দুই লাখ ৪১ হাজার ৫০৭ জন, ভাড়াটিয়া এক লাখ ৮২ হাজার ৯৪ জন, মেস সদস্য এক লাখ ২১ হাজার ৪০ জন, অন্যান্য ১১০০ জন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৮২১ জন ও গাড়ি চালক, গৃহকর্মী আট লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৪ জনসহ সর্বমোট ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৭ জনের তথ্য সংরক্ষিত আছে। এই সিস্টেমে প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি ইউনিক ইনডেস্ক নম্বর দেয়া আছে। সেই নম্বর দিয়ে সিস্টেমে সার্চ দিলে কাঙ্ক্ষিত নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।’
সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘সিআইএমএস সফটওয়ারের মাধ্যমে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করার ফলে আমাদের এই সাফল্য এসেছে। হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে ঢাকা শহরে নাগরিকের সঠিক তথ্য প্রদান ছাড়া কেউ বাসা ভাড়া নিতে পারে না।’
ডিএমপির পুলিশপ্রধান বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ করতে হলে রাষ্ট্রের অনেক টাকা খরচ হতো। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রের কোনো রকম অর্থ ব্যয় ছাড়া পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে নগরবাসীর তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছে।’
‘আমরা নাগরিকদের কাছ থেকে গৃহীত তথ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করছি। তিন বছরে কোনো নাগরিকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে আমরা সচেষ্ট আছি। সিআইএমএস সফটওয়ারের মাধ্যমে আমাদের অপরাধ ডিটেকশনের হার অনেক গুণ বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও সিআইএমএস ব্যবহারের ফলে ট্রেডিশনাল ক্রাইম হ্রাস পেয়েছে। শুধু নাগরিক তথ্য সংগ্রহ নই, সিআইএমএস ভূমিকা রাখছে নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে।’
নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহের গুরুত্ব সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করছি অনেকে নাগরিক তথ্য দিতে গড়িমসি করছে।’ নগরবাসীকে অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিজে নিরাপদ থাকুন অন্যকে নিরাপদে রাখুন। সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এবং অপরাধের হুমকি থেকে এই মহানগরীর মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করুন।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সংবাদকর্মীরা তাদের লেখার ও প্রচারের মাধ্যমে নগরবাসীকে সচেতন করতে পারেন। তারা যাতে সঠিক তথ্য পূরণ করে পুলিশকে দেয়। আমরা সংবাদমাধ্যম, টেলিভিশন ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে নগরবাসীকে সঠিক তথ্য দিতে প্রচারণা চালাব।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।