রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী ও নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরগুনা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন। মঙ্গলবার রাতে এক সংসাদ সম্মেলনে তিনি রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, যেহেতু এই মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা সে কারণে আমরা আদালতের কাছে মিন্নিকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আবেদন করব।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা পৌরসভার মাইঠা এলাকার নিজ বাসা থেকে পুলিশ লাইনে আনা হয়। তখন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত এক অভিযুক্তকে শনাক্ত করার জন্য পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে মিন্নিকে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে মিন্নিকে আবার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে।

পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত শরীফের বাবা এ হত্যা মামলার বাদী আবদুল হালিম দুলাল শরীফের অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়। রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী মিন্নি। তার বক্তব্য রেকর্ড ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সকালে বরগুনা পুলিশ লাইনে আনা হয়। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

গত (১৩ জুলাই) শনিবার রাত আটটায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে আইনের আওতায় আনার দাবি করে নিহত রিফাতের পিতা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ।

ওই সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত ছিল এমন সন্দেহে তিনি ১০টি যুক্তি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ২৫ জুন সকাল ৯টায় প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের বাড়িতে যায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। রিফাতকে ছাড়া মিন্নি প্রতিদিন কলেজে গেলেও ঘটনার দিন তাকে ডেকে নিয়ে যায় মিন্নি। ঘটনার আগে রিফাত মিন্নিকে মোটরসাইকেলে কলেজ থেকে নিয়ে আসার জন্য গেলে মিন্নি মোটরসাইকেল পর্যন্ত এসে সন্ত্রাসীদের উপস্থিত না দেখে কালক্ষেপণের জন্য পুনরায় কলেজের দিকে ফিরে যায়।

ভিডিও ফুটেছে আসামিরা রিফাত শরীফকে মারপিট করার সময় মিন্নি অত্যন্ত সাবলীল ভঙ্গিতে পিছন পিছন হাঁটছিল। যা একজন স্ত্রী’র পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করেন দুলাল শরীফ। এছাড়া রিফাত শরীফকে কোপানোর সময় মিন্নি আসামিকে জাপটে ধরেছে কিন্তু আসামিদের কেউই মিন্নির ওপর চড়াও হয়নি।

রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাত রিকশাযোগে হাসপাতালে যাওয়ার সময় মিন্নি তার ব্যাগ ও স্যান্ডেল গোছানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। এবং আসামিদের একজন রাস্তা থেকে ব্যাগ তুলে মিন্নির হাতে দেয়। এমনকি রিফাত শরীফকে বরিশাল মেডিক্যালে নেওয়ার সময়ও মিন্নি তার সঙ্গে যায়নি।

সার্বিক বিষয়ের ওপর সম্প্রতি একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিহত রিফাত শরীফের পিতা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ মিন্নিকে ঘটনার নেপথ্যের কারিগর হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি করেন।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০ টায় বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। গুরুতর আহত রিফাতকে এদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন