‘বঙ্গবন্ধু নদীপদক’ প্রদানের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৩টি আবেদনপত্র মনোনীত:
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর এ প্রচেষ্টা সঞ্জীবনী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান সরকার নদী রক্ষায় দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। নদী রক্ষায় প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু নদীপদক’ প্রদান নদী রক্ষা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করবে।
প্রতিমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু নদীপদক প্রদান জাতীয় মনোনয়ন কমিটির উপদেষ্টা আজ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বঙ্গবন্ধু নদীপদক প্রদানের জন্য জাতীয় মনোনয়ন কমিটির এক সভায় এসব কথা বলেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মনোনয়ন কমিটির সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহন সচিব বলেন, বাংলার মানুষ নদীকে ভালবাসুক, নদীর জন্য অসংখ্য বন্ধু তৈরি হউক- এটা আমার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, নদীকে বাঁচাতে চাই, পরিস্কার করতে চাই এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই।
সভায় জানানো হয় যে, বঙ্গবন্ধু নদীপদক প্রদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে আটটি এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ১৫টি আবেদনপত্র পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্য থেকে জাতীয় পর্যায়ে তিনটি এবং বিভাগীয় পর্যায়ে আটটি পদক প্রদান করা হবে। উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদকের সংখ্যা কম হতে পারে। প্রাপ্ত আবদনপত্র থেকে যোগ্য প্রার্থীর কার্যক্রম যাচাইয়ের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে দু’জন করে কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করবে। তারা তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করবে।
সরকার বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নদী দখলরোধ, শিল্পকারখানা কর্তৃক সৃষ্ট বর্জ্য এর দূষণরোধ, পরিবেশ দূষণরোধ, নদীর তীরে ও অভ্যন্তরে অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণসহ নদী ভরাটরোধ, নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রক্ষার কাজে সহায়তাদান, নদীকে নৌচলাচলে উপযোগী করে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নদীকে দূষণ ও অবৈধ দখল ভরাটমুক্ত করে স্বাভাবিক রুপে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তিকে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু নদীপদক’ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
নদী রক্ষায় ‘বঙ্গবন্ধু নদীপদক’ জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান, সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাকে বিশেষ অবদানের জন্য ১৮ আঠার ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, নগদ ৭৫,০০০ (পঁচাত্তর হাজার) টাকা ও সার্টিফিকেট এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান, সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাকে বিশেষ অবদানের জন্য ১৮ আঠার ক্যারেট মানের ৩০ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, নগদ ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। ০বিভাগীয় পর্যায়ে একটি করে মোট আটটি এবং জাতীয় পর্যায়ে তিনটি পদক প্রদান করা হবে।
পদক প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুসারে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয়/কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে কিংবা সুবিধামত সময়ে ‘বিশ্ব নৌদিবস’ এর দিন পদক প্রদান করা হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পুরস্কারের সংখ্যা ও মূল্যমান বাস্তবতার নিরিখে পরিবর্তন করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু নদীপদক নীতিমালা-২০১৯’ অনুমোদন করেছেন।
প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থা (আইএমও) সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক পরিবেশ, নৌযানের নিরাপত্তা এবং চলাচলের পথ সুগম করার লক্ষ্যে ‘বিশ্ব নৌ দিবস’ (ডড়ৎষফ গধৎরঃরসব উধু) উদযাপন করে থাকে। এবছর ২৬ সেপ্টেম্বর আইএমও কর্তৃক ‘বিশ্ব নৌ দিবস’ পালনের জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
নদীমাতৃক এ বাংলাদেশের নদী ও সমুদ্র সুরক্ষা, দূষণরোধ এবং নৌ চলাচলের পথ সুগম করার লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করার প্রয়াসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ‘বিশ্ব নৌ দিবস’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘নৌ পেশায় দক্ষ নারী, সবাই মিলে দেশ গড়ি’ এ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের যেকোন দিন বাংলাদেশে ‘বিশ্ব নৌ দিবস” পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
নৌদিবসে নদীর নাব্যতা রক্ষা, নদীর দখল ও দূষণরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মনোনীত ব্যক্তি ও সংস্থাকে প্রদানের জন্য সরকার ‘বঙ্গবন্ধু নদীপদক’ প্রবর্তনের বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করে। নদীরক্ষা কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারাদেশে বিশ্ব নৌ দিবস উদযাপন এবং ‘বঙ্গবন্ধু নদীপদক’ প্রদানের মাধ্যমে নদী রক্ষায় সকলের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও অংশিদারিত্ব সৃষ্টি করা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে এ বছরই ‘বিশ্ব নৌ দিবসে’ প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু নদীপদক’ প্রদানের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
উল্লেখ্য, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাসমূহ নদীর নাব্যতা রক্ষা, দখল ও দূষণরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নদী রক্ষাকল্পে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সহায়ক শক্তি হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পর্যায়ে পদক প্রদান করা হলে নদী রক্ষা কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।