প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার সবসময় খেলাধূলাকে গুরুত্ব দেয়, কারণ এর মাধ্যমে আগামীর নাগরিকরা যেন যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বলেই আজকে স্বাধীন দেশে আমরা এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পেরেছি। খেলাধূলার মধ্যদিয়ে দেশের মানুষ আরো সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক-সেটাই আমরা চাই।’
গতকাল শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট -২০২০ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই খেলাধূলাকে গুরুত্ব দেয় এবং আমরা চাই এই খেলাধূলার মধ্যদিয়েই আমাদের ছেলে-মেয়েরা এগিয়ে যাক। আর সেইলক্ষ্য নিয়েই আমরা প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকেই মেয়েদের জন্য বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু করেছি। শেখ হাসিনা সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করায় আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, যারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন তাদের সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিন দলের ক্যাপ্টেন ও কর্মকর্তাদের হাতে শিরোপা ট্রফি এবং ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের প্রাইজমানির চেক তুলে দেন। রানার আপ দল বুরুন্ডি ২০ হাজার মার্কিন ডলারের অর্থের চেক লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী উভয় দলের খেলোয়াড়, কর্মকতা এবং ম্যাচ অফিসিয়ালদের হাতে ব্যক্তিগত পুরস্কারও তুলে দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী খেলার প্রথমার্ধের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়ামে আসেন এবং অবশিষ্ট খেলা ভিআইপি গ্যালরিতে বসে উপভোগ করেন। এ সময় যুব ও ক্রিয়া প্রতি মন্ত্রী শেখ জাহিদ হাসান রাসেল, বাংলাদেশ সফররত ব্রাজিল বিশ্বকাপ দলের গোলরক্ষক জুলিও সিজার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী এমপি, ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের ১০ জন রেফারি ইন্সট্রাক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি থেকে টুর্নামেন্ট শুরু হয় এবং গতকাল ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু কাপ ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।টুর্নামেন্ট শেষে রেফারি ইন্সট্রাক্টর হিসাবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করায় বাাংলাদেশের কৃতি সন্তান তথা সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান জনাব তৈয়েব হাসান কে প্রধানমন্ত্রী ম্যাডেল পরিয়ে দেন।
প্রাসংঙ্গত, এই কিংবদন্তী রেফারি ১৯৭০ সালের ৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফিফা রেফারিং হিসাবে প্রথম ম্যাচ পরিচালনা শুরু করেছিলেন ১৯৯৯ সাল থেকে। এর কিছুদিন পরই ফিফার এলিট প্যানেলে যুক্ত হয়ে ফিফা আয়োজিত বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়িং, অলিম্পিক কোয়ালিফায়িং, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, বিভিন্ন রাউন্ড টুর্নামেন্ট সহ শতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনায় তিনি কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, হংকং, তাইয়ান, চীন, মঙ্গোলিয়া, ইরান, ইরাক, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাউস, জর্ডান, ওমান, উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তান, তাজাকিস্থানসহ এশিয়ার প্রায় সব দেশে ফিফা, এএফসি এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। সে হিসেবে তার গুণমুগ্ধ ভক্তদের সংখ্যা অগণিত।
রেফারিংয়ে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনিই একমাত্র বাংলাদেশী হিসাবে প্রথম এশিয়ান ফুটবল কনফিডারেশন (এএফসি), বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), সাতক্ষীরা জেলা জন সমিতি-ঢাকা, সোনালী অতীত ক্লাব-ঢাকা, বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি, বাংলাদেশ স্পোটস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেরা রেফারিং এ সম্মাননা পেয়েছেন। এবং এশিয়ান ফুটবল কনফিডারেশন (এএফসি) এর তৎকালীন প্রেসিডেন্টও তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেছিলেন।
টানা ১৮ বৎসর যাবৎ তিনি ফিফা রেফারিং হিসাবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন।এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক রেফারী অ্যাওয়ার্ড অর্জন পূর্বক শতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।