ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের প্রচারণায় যোগ দিতে যারা ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন তাদেরকে এবার শহর ত্যাগ করার জন্য বলেছেন র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) পিপিএম ।
তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীর ক্যাম্পেইন করার জন্য যারা ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিলেন, তাদের থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ, এবার আপনারা চলে যান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় কোনো লোকের অপতৎপরতা আমরা চাই না। আজ রাতে প্রচারণা শেষ হয়ে যাবে। যদি কেউ থেকেও যান, আশা করব, আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন। তবে যারা জেনুইন ভোটার তাদের চলাফেরা ও ভোটদানে সহযোগিতা করবেন। কোনো ঝামেলা করবেন না, কোথাও জড়ো হবেন না। ইটস আওয়ার ইনস্ট্রাকশন (এটা আমাদের নির্দেশনা)।’
বৃহষ্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে র্যাবের পক্ষ থেকে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘যেসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে সেদিকে র্যাবের বাড়তি নজর থাকবে। তবে আমরা আগে থেকেই কিছু করতে চাচ্ছি না। কারণ অপব্যাখ্যা হতে পারে। দেশের ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটদান ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। আমি মনে করি না, কেউ নির্বাচনকেন্দ্রিক অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করবেন। এরপরেও যদি কেউ করার চেষ্টা করেন তাহলে দেশে যে প্রচলিত আইন আছে সেই আইনের আওতায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করব, এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। যাতে করে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটতে পারে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই, সে লক্ষ্যে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা ঢাকার বাইরে থেকে প্রচার-প্রচারণা জন্য ঢাকায় এসেছেন, তবে কেউ যদি ঢাকায় অবস্থান করেন সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে র্যাব কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি না- জানতে চাইলে র্যাব ডিজি বলেন, ‘আমরা ওই পর্যন্ত যাচ্ছি না, ঢাকার বাইরের কেউ ঢাকায় অবস্থান করলে তাদেরকে জেলে পাঠাবো এমন নয়। প্রত্যেকটা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, জেল জুলুমের ভীতি আমরা দেখাতে চাই না। আমার মনে হয় না, আমার সেই পর্যায়ে রয়েছি। আমরা আহ্বান রেখেছি যেন, শহরে যারা জেনুইন ভোটার তারা সহজে শান্তিপূর্ণভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে এবং নিরাপদ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। মূলত, শৃঙ্খলা রক্ষা করাই হচ্ছে আমাদের আহ্বানের মূল লক্ষ্য। কাউকে জেলে পাঠানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে যদি কেউ জেলে পাঠানোর মতো কাজ করেন, তাহলে তো জেলেই যাবেন।’
নির্বাচনের দিন নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতীতের হিস্ট্রি যদি দেখেন তাহলে এই ধরনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ছাড়া কিছুই না। আবার পার্শ্ববর্তী দেশের নির্বাচনকালীন অবস্থা যদি দেখেন তাহলে এসব ঘটনা কিছুই না। তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে দেখার কিছু নাই আবার এটাও ঠিক, তুচ্ছ ঘটনাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যদি আইনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড ঘটে তাহলে সংক্ষুব্ধ হয়ে যেকোনো প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কমপ্লেন করতে পারেন কিংবা থানায় অভিযোগ করতে পারেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী ঢাকায় এনেছেন’। এ বিষয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক বক্তব্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে আমি বলব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় কোনো লোকের অপতৎপরতা চাই না’।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সহিংসতার আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওনারা আশঙ্কা করতে থাকুক, আর আমরা নির্বাচন করি অসুবিধা নাই।’
কাউন্সিলর পদপ্রার্থী এলাকায় কতগুলো কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ আছে? তিনি বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ না করে বলি, নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নাম অনুযায়ী প্রতিটা কেন্দ্র আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে সিকিউর করার চেষ্টা করব। বিদ্যমান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা আছেন আমরা প্রত্যাশা করব, তারা গণতন্ত্র ও মূল্যবোধ প্রদর্শন করবেন। কোনো ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি করবেন না, কেউ যদি কোনো কারণে সংক্ষুব্ধ হন তাহলে আইনের আশ্রয় নিন। আমরা সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই।’
বিগত সময়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জ্বালাও-পোড়াও পেট্রলবোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এবার নির্বাচনে এ ধরনের অপতৎপরতা হলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবেন? র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘অতীতে তাদের কি ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয়েছে আমরা সবাই জানি। তারা স্বীকার করেছেন। জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার ফলাফল স্বরূপ কারাভোগ করছেন। যদি তারা সামান্য মূল্যায়ন করে থাকেন তাহলে কখনই তারা একই কাজ আবার করবে না। আর যদি কেউ লিপ্ত হন তাহলে আমরা জনগণকে, দেশকে ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য আগে যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি নিয়ে তাদের মোকাবিলা করেছি তার চেয়ে অনেক বেশি ক্যাপাসিটি নিয়ে তাদের মোকাবিলা করব।’
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যাতে প্রতিটি ভোটার নিরাপদ পরিবেশে ভোট প্রদান করতে পারে। তারা যাকে ইচ্ছে তাকে ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট প্রদান করতে পারেন। গত নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি র্যাব সদস্য মাঠে থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে র্যাবের নেতৃত্বে একটি করে অফিসারের নেতৃত্বে পেট্রোলিং থাকবে। ঢাকায় পাঁচটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। যাতে যেকোনো আপদকালীন পরিস্থিতি অল্প সময়ের মধ্যে মোকাবিলা করতে পারি। কমান্ড বাহিনী ছাড়াও হেলিকপ্টার, বোম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে। তাছাড়া ২৪ আওয়ার স্পেশাল মনিটরিংয়ে থাকবে।’