বলছিলাম আলিপুরের ফ্লেক্সিলড দোকানদার কবিরের কথা।গত ২৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ বিকালে কোন এক কাস্টমারের লোড দেওয়ার পর তার মোবাইল ফোনটি দোকানে রেখে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাসায় চলে যায়। এসময় দোকানে কয়েকজন কাস্টমার বসা ছিলো। তাদের উপর ভরসা করেই কবির দোকান রেখে বাড়িতে যায়।
ঠিক ১৫-২০ মিনিট পরে কবির বাড়ি থেকে দোকানে এসে দেখতে পান তার মোবাইল ফোনটি যেখানে রেখে গিয়েছিলো সেখানে আর নেই। আবার চোর সন্দেহে যে কাউকে ধরবে কিন্তু যেসব কাস্টমার বসে ছিলো তারাও নেই।
বেঁচারা কবির!! মোবাইল ফোনে এক হাজার টাকা লোড দিলে মাত্র ২৭ টাকা লাভ হয়।আর আর তারপর যদি মোবাইলটি চুরি হয়ে যায় তাহলে তো লাভের গুড় পিপড়াতে খাওয়ার মত অবস্থা।মোবাইল ফোন হারানোর ২-৩ ঘন্টা পর কবির সোজা চলে আসে সাতক্ষীরা থানায় জিডি করতে।কবির থানায় ঢুকতে ইতস্তত বোধ করছিলো যে পুলিশ জিডি করতে কতটাকা চায় ঠিক নেই। এসময় কবির প্রতিবেদক কে ফোন করে সাহায্য চান থানায় জিডি করতে যাবে বলে। এক পর্যায়ে প্রতিবেদক এসে কবির কে নিয়ে সাতক্ষীরা থানার ডিউটি অফিসারের কাছে যান জিডি করার জন্য। ঐসময় থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর বুলবুল।কবিরের জিডির কাগজটি নিয়ে এসআই বুলবুল একটি জিডি নং ও তারিখ দিয়ে এককপি কবির কে ফিরিয়ে দেন। জিডি শেষে কবির এসআই বুলবুল কে বল্লেন স্যার কত কি দেবো? তখন ডিউটি অফিসার হেসে বল্লেন ভাই টাকা নিলে চাকুরী শেষ।
ভালো কথা বিনা টাকায় কবিরের জিডি হয়ে গেলো।ঐ দিনই প্রতিবেদক কবির কে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহ্উদ্দিন এঁর কার্যালয়ে।জিডির একটি ফটোকপি কবির সদর সার্কেলের কাছে দিয়ে আসেন। এসময় সদর সার্কেল মহোদয় কবির কে প্রশ্ন করেন ফোন হারিয়ে গেছে নাকি চুরি হইছে? কবির তখন উত্তর দিলেন স্যার মোবাইল টি মনে হচ্ছে কেউ চুরি করেছে। সদর সার্কেল মহোদয় তখন হেসে দিয়ে বল্লেন চুরি হলে আলাদা ট্রিটমেন্ট আর হারিয়ে গেলে আলাদা ট্রিটমেন্ট।
জিডি করার এক মাস পার হয়ে গেলো কিন্তু ফোন এখনো উদ্ধার হলো না।হারানো মোবাইলের মালিক প্রতিবেদক কে প্রতি মাসে মাসেই ফোন দিয়ে বলেন কাকু মোবাইল তো উদ্ধার হলোনা। প্রতিবেদক একটু বিরক্ত হলো কবিরের কথা শুনে।ঘটনার দুই মাস হয়ে গেলো কিন্তু ফোন উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এক পর্যায়ে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহ্উদ্দিনের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান,এএসআই সাইফুল(২) ও সঙ্গীয় ফোর্স তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে মাঠে নামেন সেই হারানো ফোন উদ্ধার করতে। অবশেষে গতকাল শনিবার বিকালে সাতক্ষীরা সদর থানার সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম হারানো মোবাইলের প্রকৃত মালিক কে ফোন করে জানান যে থানায় এসে আপনার মোবাইল ফোনটি নিয়ে যান।এখবর শুনে ফ্লেক্সিলড দোকানদার প্রতিবেদক কে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরা থানায় যান উদ্ধারকৃত মোবাইলটি আনতে।
পরে সাতক্ষীরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান ও এএসআই সাইফুল হারানো মোবাইলের প্রকৃত মালিককে তার মোবাইল ফিরিয়ে দেন।মোবাইল হস্তান্তর করার সময় সাতক্ষীরা থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
হারানো মোবাইলটি ফিরে পেয়ে ফ্লেক্সিলড দোকানদার কবির আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলেন “আমি কখনোই ভাবিনি যে এতদ্রুত আমার হারানো মোবাইলটি পেয়ে যাবো তাও আবার বিনা টাকা খরচে। এসময় লোড দোকানন্দার আপডেট সাতক্ষীরা ডটকমের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) , সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহ্উদ্দিন ও সাতক্ষীরা থানার সদ্য বিদায়ী ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এত দিন থানার সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ছিলো সেবাই পুলিশের ধর্ম কিন্তু সেটা আমার বিশ্বাস হতোনা কিন্তু আজ বিশ্বাস হলো মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, সাতক্ষীরার পুলিশ এখন জনতার”।