🌴বাবা চিরদিনই বটবৃক্ষ🌴

বহু দিবসের মধ্যে বাবা দিবস একটি । আমি যা বুঝি সেটা এমন…… বাবা ও মা এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন লাগে না। বছরের ৩৬৫ দিনই একই। বাবা মা এর জন্যই তো এই পৃথিবীর মুখ দেখেছি, তাই তাদের ভালোবাসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিন দরকার নাই।

কোথায় যেন পড়েছি সম্ভবত ৮/৯ম শ্রেণির বাংলা রচনা শিখতে যেয়ে ” Allah’s satisfaction is on the satisfaction of parents & Allah’s dissatisfaction is on the dissatisfaction of parents “. বাবা’ও ছোট্ট একটি শব্দ, অথচ গভীরতা অতলান্ত-অসীম। পবিত্র কুরআনে সুরা আহকাফের ১৪ নম্বর আয়াতে, বনী ইসরাইলের ২৪ নম্বর আয়াতে, সুরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে সুরা লোকমানের ১৪ আয়াতে পিতা-মাতার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ পাক। সন্তানের জন্য পিতার দোয়া আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে কোন আড়াল থাকে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘পিতা-মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। (তিরমিযী, তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬/২৫)। রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তার নাক ধূলায় মলিন হোক (৩ বার),সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, সে হলো ঐ ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা করে জান্নাত হাসিল করতে পারলো না’ (মুসলিম-৪/১৯৭৮, হা-২৫৫১)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত।’ (তিরমিযি-১৮৯৯)। ‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’— সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে স্বর্গজ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন। পিতা সন্তানের মাথার ওপর যার স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো, সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় তাঁকে। আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতেও পারে না।

তাহলে কি নির্দিষ্ট কোনো দিনের দরকার আছে? আমার কাছে মনে হয় নির্দিষ্ট দিন নয়, বছরের প্রতিটা দিন, প্রতিটা ঘন্টা , প্রতিটা মিনিট এবং প্রতিটা সেকেন্ড একই রকম ভাবে বাবা মা কে দেখা উচিত।

আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দেই না। . যখন দাঁত পড়ে যায়, তখন কেবল বুঝি দাঁত কত মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কথায় বলে Every father loves his child. এটা চিরন্তন সত্য। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমার বাবাই সবচেয়ে ভালো। একজন আর্দশ শিক্ষক হিসেবে উনি সব সময় চেষ্টা করেছেন আমার বায়না না চাইতে সব পূরণ করেতে ।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এখনও মাঝে মাঝে আমাকে টাকা দেন। যেখানে এখন আমার দেয়ার কথা কারন আমি একটা চাকুরী করি, সেখানে উনি দেন। উনি নাকি বুঝতে পারেন কখন আমার কষ্টে দিন যাচ্ছে, তখন দেন। আমার কথা খুবই স্পষ্ট সন্তান কে প্রতিষ্ঠিত করার পর, সন্তান কে বড় করার পর বাবা দিক আর নাই দিক……

সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকে যেভাবে আদর যত্নে লালন পালন করে বড় করেন, ঠিক একই ভাবে সন্তানের ও উচিত বাবা ও মা কে সেবা যত্ন করা। তীব্র ইচ্ছা থাকলেও নানান কারনে সেটা সম্ভব হচ্ছে না ।

আজ বাবা দিবসে র্সৃষ্টিকর্তা র কাছে প্রার্থনা হে আল্লাহ তুমি আমার বাবা, মা কে দীর্ঘায়ূ দান করো যাতে তাদেরকে একটু সেবা করতে পারি। আমি বাবা হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার বাবা প্রায় বলতেন যখন তুমি বাবা হবে তখনই কেবল বুঝবে সন্তান কি জিনিস! আল্লাহ আমাদের দুটি সন্তান দিয়েছেন, এখন বুঝি আসলেই কি জিনিস। পৃথিবীর অন্য কিছুর সাথে এর তুলনা চলে না। আল্লাহ র প্রতি গভীর ও অশেষ কৃতজ্ঞতা আমি আজ দুই পুত্রের বাবা।

রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা” “… My Lord! Have mercy on them both (parents) as they did care for me when I was little.” (Sura: Al-Isra, Ayat: 24)। পবিত্র কুরআনের এই নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের চলা উচিত।

মরিয়া বাবর অমর হইয়াছে, নাহি তার কোনো ক্ষয়, পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়।’ দিল্লির সম্রাট বাবর ছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি স্বীয় বীরত্ব ও বিচক্ষণতায় মোগল সাম্রাজ্যের ভিত রচনা করেন। প্রাণপ্রিয় পুত্র হুমায়ুনের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রদর্শন করে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে স্নেহবৎসল পিতা হিসেবে অনন্য নজির স্থাপন করে গেছেন। তার পুত্র হুমায়ুন কঠিন রোগে আক্রান্ত। রাজ্যের সব বিজ্ঞ চিকিৎসক তাকে সারিয়ে তোলার কাজে সদা নিয়োজিত। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। তার জীবনপ্রদীপটা ক্রমেই নিভে আসছে। বাবর হেকিমদের ডেকে ব্যগ্র কণ্ঠে জানতে চাইলেন এ রোগ থেকে শাহজাদা মুক্তি পাবে কি? উত্তরে সবাই নীরব। এই নিষ্ঠুর নীরবতা বাদশাহ্র বুকে শেল হয়ে বিঁধল। এমন সময় জনৈক দরবেশ বললেন, সম্রাট যদি তার শ্রেষ্ঠ ধন মহান আল্লাহ্র উদ্দেশে উৎসর্গ করতে পারেন তবেই আল্লাহ্র রহমতে শাহজাদার প্রাণ রক্ষা পেতে পারে। সম্রাট গভীরভাবে উপলব্ধি করলেন, তার সর্বশ্রেষ্ঠ ধন হল তার নিজের জীবন। তবু তার কোনো শঙ্কা নেই। তিনি আন্তরিকভাবে চান তার জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন রক্ষা পাক। তখন বাবর নিজগৃহে গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র দরবারে নিজ জীবনের বিনিময়ে পুত্রের রোগমুক্তি কামনা করেন। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করলেন। সেই দিন থেকে বাবরের রোগ লক্ষণ দেখা দিল এবং হুমায়ুনের রোগ মুক্তি হল। বাৎসল্য বাবর তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে রইলেন।

আসলে পিতা চিরকালই বটবৃক্ষ। আপন প্রাণরস দান করে ফল সতেজ রাখাই বৃক্ষের ধর্ম। আর এভাবেই সন্তানের প্রতি জন্মদাতা পিতার ভালোবাসা, আদর, সোহাগ অক্টোপাসের মতোই মায়ার জালে বন্দি হয়ে আছে সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। বাবারা সূর্য হন। নিজেদের সবসময় জ্বেলে রেখে, জ্বালিয়ে রেখে শত অন্ধকার থেকে আমাদের আগলে রাখেন। বাবারা আকাশ হন। যে আকাশের নিচে আমরা একটু একটু করে বড় হই, যে আকাশ আমাদের কাছে ভরসার একমাত্র জায়গা, যে আকাশকে দেখে আমরা লড়াই করতে শিখি।

তিনি বটবৃক্ষ, নিদাঘ সূর্যের তলে সন্তানের অমল-শীতল ছায়া। তিনি বাবা। বাবার তুলনা তিনি নিজেই। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা মানে নির্ভরতার আকাশ আর নিঃসীম নিরাপত্তার চাদর। বাবা মানে নির্ভরতার প্রতীক। বাবা মানে নির্ভরতার বিশাল আকাশ। বাবা মানে নির্ভরতার নিখাদ আশ্রয়। বাবা মানে পড়ন্ত বিকেলে কাঁধেে চেপে বেড়ানো। বাবা মানে প্রখর রোদে শীতল ছায়া। বাবা মানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অবলম্বন। বাবা মানে মহান ত্যাগী মানুষ। বাবা মানে সাহস, বাবা মানে শক্তি। বাবা মানে শর্তহীন ভালোবাসার প্রতীক। বাবা মানে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। বাবা মানে প্রখর রোদে ছায়ানীড়, বটবৃক্ষ। বাবা মানে ভরসার ছায়া। বাবা মানে যার কোনো তুলনা হয় না। বাবা মানে অনেক ব্যথায় ও হাসিভরা মুখ। বাবা মানে শর্তহীন নিরাপদ ঠিকানা। বাবা মানে নির্ভরতার আলিঙ্গন সহ অনেক অনেক কিছু ।

কবিতার মাধ্যমে বাবা মানেঃ

বাবা মানে স্বপ্নের জাদুকর..!

বাবা মানে শত শাসন থাকা সও্বেও স্নেহ মমতা আদর মাখা এক নিবিড় ভালোবাসা..!

বাবা মানে নিজের স্বপ্ন গুলো স্বপ্নরাজের মতন ধীরে ধীরে পূরন করা..!

বাবা মানে সংসারে অভাব অনটন থাকলেও সন্তানকে কখনো বুঝতে না দেওয়া..!

পৃথিবীর প্রতিটা সংসারে একটা অবহেলিত পুরুষ থাকে তার নাম বাবা.!

প্রচন্ড রোধে পুরে ঝড় বৃষ্টি তুফান সব মাথায় ফেলে পারিবারের সকলের যে মানুষটা সাধ্যে মধ্যে সবার মুখে খাবার তুলে দেয় সেই মানুষটার নাম বাবা..!!!

ইতিহাস থেকে যতদুর জানা যায়, প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় বাবা দিবস। ১৯১০ সালে আমেরিকার সেনোরা লুইসের একান্ত প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো বিশেষ এই দিনটি উদযাপিত হয়। সেনোরা ছিলেন ৬ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মা ইলেন স্মার্ট যখন মারা যান তখন সেনোরার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা উইলিয়াম স্মার্ট সন্তানদের মানুষ করার দায়িত্ব নেন। সারাক্ষণ তিনি তাদের দেখেশুনে রাখতেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও স্মার্ট তাদের মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন স্থায়ীভাবে বাবা দিবসকে রাষ্ট্রীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকে বিভিন্ন দেশে তাৎপর্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। কয়েকটি দেশে বিভিন্ন তারিখে বাবা দিবস পালিত হলেও আজ বাংলাদেশসহ ৮৭টি দেশ এ দিবস পালন করছে। পৃথিবীর সব সন্তান যেন তাদের বাবাদের বৃদ্ধ বয়সে (ফযরে আইন এর মতো), ও সন্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারের মধ্যে রেখে পরম যত্ন, অসীম ভালোবাসা, সেবা ও শুশ্রূষা দিয়ে তাদের সব হতাশা আর কষ্ট চিরতরে ভুলিয়ে দিতে পারে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বড় আশ্চর্যের বিষয় এবং সাথে গভীর অনুতাপের বিষয় ও বটে যে, বৃদ্ধ বয়সে পিতা মাতা কে দেখাশুনা ও ভরনপোষণের জন্য এখন বিধিমালা তৈরি করা লাগছে। মানুষের মনুষ্যত্ব ও বিবেক কোথায় গেছে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ সকল সন্তানদের তুমি হেদায়েত দান করো আর সকল বাবাদের দীর্ঘজীবি করো। আমার পিতা কে ও যেন দীর্ঘজীবি করেন… সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।

লেখক : সাবেক সফল নির্বাহী অফিসার দেবহাটা, সাবেক সফল সচিব ঢাকা ওয়াসা ও ডেপুটি সেক্রেটারি শিক্ষা মন্ত্রনালয়  জনাব আ.ন.ম তরিকুল  ইসলাম। 





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন