ক্রসফায়ার বেরসকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) শব্দ বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এ ঘটনায় কোনো মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করলেও তারা সফল হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
৫ আগস্ট, বুধবার দুপুর ২টার পর কক্সবাজারে সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ নিহত হওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সংবাদসম্মেলনে আইজিপি এই মন্তব্য করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা ক্রসফায়ার শব্দের সঙ্গে একমত নই। এটি এনজিওগুলো বলে। আমাদের এখানে যারা এনজিও চালান, তারা বিভিন্ন কারণে বিদেশ থেকে টাকা-পয়সা আনেন। ঝকঝকে গাড়িতে চড়েন, ঝকঝকে অফিসে বসেন। জাস্টিফাই করতে হলে অনেক রকমের কথা বলতে হয়- এর মধ্যে একটি হলো ক্রসফায়ার।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেনাবহিনী এবং পুলিশের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দুই বাহিনীর মধ্যে পরস্পর আস্থা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক রয়েছে। এই ঘটনায় কোনোভাবেই এর অবনতি ঘটবে না। আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তারা সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে। এ ঘটনায় কোনো কোনো মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে, তবে তারা সফল হবে না।’
এর আগে বুধবার দুপুরে হেলিকপ্টারে করে তারা টেকনাফের পৌঁছান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। সেখানে পৌঁছে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য শুনেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
প্রসঙ্গত, ৩১ জুলাই, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে একটি চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬) নিহত হন।
এ বিষয়ে পুলিশ দাবি করেছিল, ওই সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসছিলেন। এসময় তার গাড়িতে আরো একজন ছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এই শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। এক পর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই সেনা কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আজ শনিবার সকালে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
তবে পুলিশের এমন ভাষ্য নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার প্রত্যক্ষর্শী নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তার এক সঙ্গীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের ভাষ্যের কিছুটা অমিল রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সেখান থেকে ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২ জুলাই, রবিবার এই প্রত্যাহার আদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়া তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করেছেন হয়েছে। এ মামলায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া চেকপোস্টের ইনচার্য লিয়াকত হোসেনসহ ৯ জনকে আসামী করা হয়েছে।
আজ ৫ আগস্ট, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে মামলাটি দাখিল করা হয়।