চুড়ামনকাটির কাঠ ব্যবসায়ী মোস্তফার ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো জেলা পুলিশ যশোর।
গ্রেফতার-২, হত্যাকাজে ব্যবহৃত চাকু ও মটরসাইকেল জব্দ; ভিকটিমের মোবাইল উদ্ধার।
ঘটনার বিবরণঃ
চুড়ামনকাটির কাঠ ব্যবসায়ী বাগডাঙ্গা সরদারপাড়া সাকিনের মৃত পাচু মন্ডলের ছেলে গোলাম মোস্তফা (৫৫) গত ইং ২৪/১০/২০২০ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.০০ ঘটিকার সময় ব্যবসায়ীক কাজে বাড়ী থেকে বের হয়ে সময় মত বাড়ী না আসায় পরিবারের লোকজন মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে, কিন্তু কোন সারা না পেয়ে খোঁজাখুজি করে।
পরের দিন গত ইং ২৫/১০/২০২০ তারিখ সকাল অনুমান ০৯.৩০ ঘটিকার সময় কাশিমপুর ইউপিস্থ ঘোনা গ্রামের জনৈক চিত্ত বাবুর মেহগনি বাগানের দক্ষিন পাশে বুড়ি ভৈরব নদীর পানিতে ভাসমান উপরে কচুরিপনা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় গোলাম মোস্তফার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
গোলাম মোস্তফাকে অজ্ঞাতনামা আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে গলা কেটে জবাই করে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এই ঘটনা সংক্রান্তে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৬৮ তাং-২৬/১০/২০২০ ইং ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর, স্পর্শকাতর ও ক্লুলেস হওয়ায় জেলা পুলিশ সুপার জনাব মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, পিপিএম মামলাটি দ্রæত সময়ে উদঘাটনের জন্য কোতয়ালী থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার উপর কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার উপর তদন্তভার ন্যাস্ত করেন।
গ্রেফতার ও উদ্ধার অভিযানঃ
যশোর জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, পিপিএম, মহোদয়ের দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ), জনাব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেলা বিশেষ শাখা, (ডিএসবি) জনাব মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, পিপিএম এবং যশোর “ক” সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ গোলাম রাব্বানী শেখ, পিপিএম দ্বয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি), অফিসার ইনচার্জ জনাব সোমেন দাশের নেতৃত্বে ডিবি’র এসআই (নিঃ)/ মফিজুল ইসলাম, পিপিএম, এসআই (নিঃ)/ নূর ইসলাম ও এসআই(নিঃ) শামীম হোসেনসহ জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি), একটি চৌকস টিম গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ইং ২৮/১০/২০২০ তারিখ সন্ধ্যা রাত ১৮.৩০ ঘটিকার সময় কোতয়ালী থানা পুলিশের সহযোগীতায় চুড়ামনকাটি বাজার হইতে তদন্তে প্রাপ্ত আসামী ১। আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে তার স্বীকারোক্তি মতে কোতয়ালী থানাধীন মোড়লী মোড়ে অভিযান পরিচালনা করে তার সহযোগী আসামী ২। মোঃ শহিদুল ইসলাম কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের উভয়ের স্বীকারোক্তি মতে রাত ২৩.২০ ঘটিকার সময় আসামী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বসতবাড়ীর ভিতরে টিউবওয়েল পাড়ে লাকড়ীর নিচ হতে হত্যা কাজে ব্যবহৃত ধারালো বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম গোলাম মোস্তফা ও ধৃত আসামী আব্দুল্লাহ আল মামুন উভয়েই কাঠ ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীক দেনা-পাওনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের সৃষ্টি ও একচ্ছত্র ব্যবসা করার লালসে আসামী আব্দুল্লাহ আল মামুন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার সহযোগী সহিদুল ইসলামকে নিয়ে গত ইং ২৪/১০/২০২০ তারিখ বিকালে শহিদুলকে কাঠ ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে কাঠ ক্রয়/বিক্রয়ের আলোচনা করে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় মটরসাইকেল যোগে চৌগাছা থানাধীন শলোয়া এলাকায় ভিকটিম মোস্তফাকে নিয়ে ফেনসিডিল খাইতে যায় এবং রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় মামলার ঘটনাস্থলে নেশাদ্রব্য গাঁজা সেবন করিয়ে অতর্কিতভাবে গলায় চাকু দিয়ে পোচ মেরে জবাই করে হত্যা নিশ্চিত করে লাশ নদীর পানিতে ফেলে দেয় এবং কচুরি পানা দিয়ে ঢেকে দেয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম ঠিকানাঃ
১। মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৩), পিতা- মোঃ আব্দুর রহমান, সাং-চুড়ামনকাটি, থানা- কোতয়ালী, জেলা-যশোর।
২। মোঃ সহিদুল ইসলাম (৩৭), পিতা-মোঃ মাজেদ মোল্যা, সাং-শাখারী গাতী, থানা- কোতয়ালী, জেলা-যশোর।
উদ্ধারকৃত আলামত :
১। ভিকটিম গোলাম মোস্তফার মোবাইল ফোন
২। হত্যাকাজে ব্যবহৃত ০১টি বার্মিজ চাকু।
৩। আসামীদের ব্যবহৃত মটরসাইকেল-১টি।
৪। আসামীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন-২টি।