এ বছরের শুরু থেকেই একের পর এক ইস্যুতে সরব হয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আন্দোলনের নামে জড়িয়েছে সহিংসতায়। এসব ঘটনায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আছে একাধিক মামলা। সেই মামলায় একে একে গ্রেপ্তার হয়েছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। হেফাজতে ইসলামের বর্তমান সময়ের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে এতদিন রাখা হয়েছিল নজরদারিতে। পুলিশ জানিয়েছে, নজরদারিতে রেখে তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ পাওয়ায় রবিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের প্রথম সারির এই নেতাকে।

হেফাজতে ইসলাম নেতাদের গ্রেপ্তার এবং তাদের জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বরাবরই তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এনিয়ে সংগঠনটি যেন কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জোরদার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে হেফাজত অধ্যুষিত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন থানা ছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসা ও পাড়া মল্লায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে মামুনুলকে গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরে অভিযানের সময় প্রায় দুশোর বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।

ডিএমপির একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রতিবেদককে জানান, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে। অনেক থানার প্রধান ফটকে ভারি অস্ত্রসহ ‘পুলিশ সদস্যরা’ ডিউটি করছে। তবে যেসব থানায় ‘ভারি অস্ত্র’ বসানো হয়নি, তাদের প্রধান ফটকে অস্ত্রসহ লোকবল বাড়াতে বলা হয়েছে। তাছাড়া রাস্তায় বা পাড়া মহল্লায় চেকপোস্টে পুলিশি তল্লাশীর পাশাপাশি বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসায় পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশের কোন সদস্য যাতে একাএকা ডিউটি না করেন বা বাইরে একা না ঘোরাফেরা করেন সেই বিষয় খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ঊদ্ধর্তন দুইজন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, আগে থেকেই জেলা জুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। টহল পুলিশ বাড়ানোর পাশাপাশি কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশী করা হচ্ছে। শুধু মামুনুল হকের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করেই এই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়নি। আগেই সতর্ক অবস্থানে থাকতে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের স্ব স্ব জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ যাতে কোনোভাবেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, মানুষ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আজ দুপুর পৌনে ২টার দিকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলার তদন্ত চলছিল। তদন্তে হেফাজত নেতা মামুনুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ায় আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করে ডিসি হারুন বলেন, ‘আপনারা জানেন বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের বিভিন্ন জায়গায়, থানায়, বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর হয়েছে। অনেক ঘটনাই ঘটেছে। এছাড়া আমাদের মোহাম্মদপুর থানায় একটি ভাংচুরের মামলা ছিল। সেই মামলায় আমরা তদন্ত করছিলাম। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কনফার্ম হয়েছি যে এই মামলার সঙ্গে তিনি (মামুনুল) জড়িত। আমরা মোহাম্মদপুর থানার মামলায় মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া থেকে তাকে আজ গ্রেপ্তার করেছি।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, পল্টন থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় নাশকতার মামলা, ভাঙচুরের মামলাসহ অনেকগুলো মামলা রয়েছে। সেই মামলায় আমরা শুনেছি শ্যোন এরেস্ট দেখানো হতে পারে।’

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের নির্দেশের পর গত সপ্তাহে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল ও ওয়ারী বিভাগের প্রতিটি থানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। প্রতিটি থানায় বসানো হয়েছে লাইট মেশিনগান (এলএমজি) ও চায়নিজ রাইফেল সংবলিত চৌকি। বালুর বস্তা দিয়ে তৈরি চৌকিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। এই থানাগুলোতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ সদস্যরা নিয়জিত রয়েছে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন