মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ২০২০ সালের পুরোটাই ছিল বিধ্বংসী এক বছর। সেই বছরের শেষের দিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।
পুলিশপ্রধান হিসেবে সাফল্যের সঙ্গেই নিজের সমৃদ্ধ অধ্যায়ের সমাপ্তির পর রাষ্ট্রদূত হিসেবেও নিজের মেধা-মনন ও নেতৃত্বের দক্ষতায় অনন্য কর্মস্পৃহার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় যখন গোটা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখন কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অভিবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্টসহ সব ধরনের কনস্যুলার সেবা নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস।
প্রতিদিন প্রায় শতাধিক প্রবাসী এই সেবা পাচ্ছেন। এর ফলে দূতাবাসের প্রতি প্রবাসীদের আস্থা আরও বাড়ছে। জীবনের ঝুঁকির মধ্যেও ফ্রন্ট লাইনে থেকেই পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড.পাটোয়ারী। এই দূতাবাসের কর্মীদের নিয়মানুবর্তিতা, সাহস ও সেবা সব মহলেই কুড়িয়েছে প্রশংসা। সঙ্কটে পাশে থেকে অর্জন করেছে সুনামও।
সৌদি আরবের রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে মিলেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রদানের জন্য অভিবাসীদের টোকেন প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি দূতাবাস চত্বরে তাদের পানির ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় হালকা খাবারের জন্য ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সেবা প্রার্থীদের দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু চত্বরে ছাউনিতে বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, কনস্যুলার সেবা প্রদানকালে যেসব প্রবাসী নানা সমস্যার কারণে দেশে ফিরে যেতে চান, তাদের ট্র্যাভেল পারমিট প্রদান করা হচ্ছে। দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের পক্ষ থেকে স্পেশাল এক্সিট প্রোগ্রামের আওতায় হুরুবপ্রাপ্ত, ইকামাবিহীন ও এক্সিট ভিসায় মেয়াদোত্তীর্ণ অভিবাসীদের আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়।
এছাড়া অভিবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের নিবন্ধন করা হয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকদের মালিক পক্ষ থেকে বকেয়া বেতন আদায়, কর্ম জীবন শেষে সার্ভিস বেনেফিট আদায় করার জন্য সকল সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। কোনো প্রবাসী মারা গেলে মালিকপক্ষ থেকে তার বকেয়া আদায়, মৃতদেহ দেশে প্রেরণসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশি অভিবাসীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা অত্যন্ত দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। দূতাবাসের সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে অ্যাকাউন্ট খোলা ও ওয়েজ আর্নার্স বন্ড করার সেবা প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।
এদিকে সেবাগ্রহণ করতে আসা অভিবাসীদের জন্য দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নার উন্মুক্ত রাখা হয়েছে; যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ বিভিন্ন বই সর্বসাধারণের পাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা যায়, সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের মধ্যে কেউ সমস্যায় পড়লে আশ্রয়ের জন্য দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে একটি সেফ হাউজ পরিচালিত হচ্ছে। নারী গৃহকর্মীরা দূতাবাসে আশ্রয়ের জন্য আসলে তাদের সেফ হাউজে রাখা হয়। সেখানে তাদের থাকা খাওয়া ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
এছাড়া নারী গৃহকর্মীদের আইনগত সহায়তা প্রদান শেষে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত দেশে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থাও করছে দূতাবাস।
প্রবাসীদের সঙ্গে ভালো আচরণের পাশাপাশি প্রবাসীদের সেবাপ্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
তিনি বলেন, সবাইকে সুন্দরভাবে সেবা প্রদান করতে হবে। কারো সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই খারাপ আচরণ করা যাবে না। দূতাবাস যেকোনো প্রয়োজনে অভিবাসীদের পাশে রয়েছে।
এদিকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে কয়েক লক্ষ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রমঘন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তারা। এসব প্রবাসীর সেবা প্রদানের জন্য দূতাবাসের পাশাপাশি কয়েকটি প্রবাসী সেবাকেন্দ্র কাজ করছে।
এসব সেবাকেন্দ্র থেকে সপ্তাহে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাসপোর্ট নবায়ন, রি-ইস্যুসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা দেওয়া হচ্ছে।
একই সঙ্গে সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে অবস্থিত ১৯টি প্রবাসী সেবাকেন্দ্র থেকেও প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার অভিবাসীকে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
জানা যায়, সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশিদের প্রয়োজনে দূতাবাসের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও তথ্য জেনে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দূতাবাসের হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে- ৮০০১০০০১২৪ (কনস্যুলার), ৮০০১০০০১২৫ (শ্রম) ও ৮০০১০০০১২৬ (পাসপোর্ট)।
কর্মকর্তারা বলেন, দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রবাসীদের নিয়মিত বিভিন্ন জরুরি বিষয়ে অবহিত করা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
দূতাবাসের সেবা সম্পর্কে যেকোনো অভিযোগ জানানোর জন্য দুটি অভিযোগ জমাদান বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত ড. জাবেদ পাটোয়ারীর এসব উদ্যোগে বেশ আনন্দিত প্রবাসীরা।
এদিকে সৌদি আরবে করোনা ভাইরাস সংক্রমনে এ পর্যন্ত যেসব বাংলাদেশি মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। একই সঙ্গে তিনি অভিবাসী বাংলাদেশিদের দ্রুত করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনামূল্যে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা ও টিকা প্রদান করার জন্য সৌদি সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
– সংবাদ কালের আলো।