সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় মুজিবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার জমি সহ নবনির্মিত বাসগৃহে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছে ৪০০ পরিবার। সদর উপজেলার গাভারচরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া এসব পরিবার কেউ থাকতেন কবরস্থানে। কারোর আশ্রয় ছিলো ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধের উপর অথবা সরকারি সড়কের পাশে। জমি কিনে ঘর তৈরি করার সামর্থ্য ছিলোনা তাদের। এখন জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে তারা নতুন করে জীবন ধারণের স্বপ্ন দেখছে। সোমবার সরজমিনে গেলে উপকারভোগীরা এসব কথা বলেন। তারা জানান তাদের মাথাগোঁজার জায়গা হয়েছে। এখন তারা বাড়ি সাজিয়ে তুলছেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীনদের আশ্রয়ন প্রকল্পে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউপির গাভারচরে ১৩০ টি পরিবার নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা পল্লী। এছাড়া ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দাহে আরও ৪৭ টি পরিবার নিয়ে সরকারের এ আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করাহয়েছে। বাকি ২২৩ টি ঘর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে বিভিন্ন উপকারভোগীদের মাঝে বাস্তবায়ন করাহয়েছে বলে জানিয়েছে সদর উপজেলা প্রশাসন।
সাতক্ষীরা সদরের গাভার চরে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা পল্লীর শম্ভু দাশ জানান, প্রধানমন্ত্রী জমি সহ ঘর দিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন, গভীর নলকূপ বসিয়ে দিয়েছেন, যাতায়াতের রাস্তা করে দিয়েছেন আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই।
সেখানে জমিসহ পাকাবাড়ি পাওয়া সাদ্দাম হোসেন জানান, আগে বেড়িবাঁধের উপর দিন কাটিয়েছি। ঝড়বৃষ্টি হলে ভাঙ্গন দেখাদিতো। সেখানে টিকে থাকতে পারতাম না। এখন সে সমস্যা আর নেই।
অপরদিকে সাতক্ষীরা সদরের হাড়দ্দাহ আশ্রয়ন প্রকল্পে জমিসহ পাকাবাড়ি পাওয়া ফাহিমা খাতুন বলেন, ছেলেমেয়ে নিয়ে ভোমরায় এক কবরস্থানে বসবাস করতাম। কখনো ভাবিনি জমিসহ ঘর পাবো। প্রধানমন্ত্রী আমার আশা পূরণ করেছে।
রহিমা খাতুন জানান,আমি এখন নতুন ঘরের বাসিন্দা। প্রতিবন্ধী স্বামী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে আগে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। সেখানে টাকা দিতে না পারায় অনেক গালমন্দ শুনেছি। এখন ঘর জমি পেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে খুশি মানুষ আমি।
আরো এক উপকারভোগী হাড়দ্দাহর সুফিয়া খাতুন বলেন,আগে বাপের বাড়িতে গুচ্ছ গ্রামে থাকতাম। সেখানে অনেক কষ্ট পেয়েছি। এখন আর কোনো কষ্ট নেই।
হাড়দ্দাহে জমিসহ পাকাবাড়ি পাওয়া একাধিক উপকারভোগী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, পূর্বে যারা এসব জমি ভোগ দখল করতো তারা পূনরায় জমি দখল করার পায়তারা করছে। তারা আমাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাদের ব্যবহারের জন্য সরকারের দেওয়া জমিতে তারা জোর করে ফসল আবাদ করছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এখানে বসবাস করছি। একারণে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছি না। আমরা এর প্রতিকার চাই।
ভোমরা ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আশ্রয়ন প্রকল্পে দুটি গভীর নলকূপ বসিয়ে দিয়েছি। পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে একটি প্রভাবশালী পক্ষ এসব উপকার ভোগীদের তাড়িয়ে এই জমি ও ঘর দখলের চক্রান্ত করছে। তারা জনসাধারণের মাঝে ও সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা জানিয়েছেন, পরম যত্ন সহকারে ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে। এখন সংযোগ সড়ক, বনায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ চলছে। সদর উপজেলায় ৪০০ ঘরের মধ্যে ৩৬০ টির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। আরও ৪০ টি ঘরের কাজ শেষের পথে। হাড়দ্দাহে উপকারভোগীদের জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। তেমন কিছু হলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।