অফিসার ও ফোর্সদের কাঁদিয়ে নতুন কর্মস্থলের উদ্যেশ্যে চলে গেলেন সাতক্ষীরার মানবিক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)।সোমবার ২২ আগস্ট দুপুরে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা ও পুস্প সুসজ্জিত গাড়িতে রশিটেনে তাকে বিদায় জানানো হয়।
জেলা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)। তিনি সুনামের সাথে দীর্ঘ ৩ বছর এক মাস দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলায় যোগদানের পর জেলা পুলিশ অপরাধ দমনে তার নেতৃত্বে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। পুলিশি সেবা জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছেদিতে রাত দিন নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন তিনি।
তাঁর কর্মকালীন সময়ে নিয়মিত ৮ হাজার ৭৪৪ মামলায় ১০ হাজার ৪২৭ জন আসামি গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে ২৫ হাজার ৯১৮ জন আসামি গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করাহয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তার নেতৃত্বে জেলায় ২ হাজার ৩১৫ টি মাদক মামলায় ১ হাজার ৬৪৭ জন আসামি গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে ফেনসিডিল ১৩ হাজার ৬৪৩ বোতল, গাঁজা ২৯৯ কেজি, ইয়াবা ২৬ হাজার ৪৪৯ পিস, দেশি মদ ১৭৩ বোতল, বিদেশি মদ ৮০ বোতল। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এর সময় কালে জেলার বিভিন্ন থানায় ৩৮ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করাহয়।
এছাড়া তিনি চোরাচালান, ছিনতাই, নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদ টেন্ডারবাজি রোধ কল্পে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার মামলা, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল হত্যা মামলা, সহ শতাধিক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও এর সাথে জড়িত আসামি গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার ব্যাবস্থা করেন তিনি।
এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলায় সকল ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটনসহ ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িতদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার পূর্বক আসামিদের আদালতে সোপর্দ করার ব্যাবস্থা করেন তিনি।
অপরাধ দমন ছাড়াও বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম করে সাতক্ষীরাবাসীর মনে মানবিক পুলিশ সুপার হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। করোনা মহামারিতে জেলার ৭ হাজার ৫শ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে লকডাউন বাস্তবায়নে সাহসী ভূমিকা রেখেন তিনি।
তাঁর দ্বায়িত্ব কালে জেলা পুলিশে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। তিনি জেলা পুলিশের আওতায় ৪৪টির অধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এদের মধ্যে বৃক্ষ রোপণ,পুলিশ লাইন্সের জরাজীর্ণ রাস্তা সংস্কার, মসজিদ নির্মাণ, শ্যামনগরে জেলা পুলিশের উদ্যোগে লঞ্চঘাট ও স্প্রিডবোট এর ব্যবস্থা করাহয়। সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল। যার মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধ করা ব্যাক্তিদের খুব সহজেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। জেলার ৬০০ এর বেশি হারানো ও চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বিকাশ ও নগত প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ৫ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলায় মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) তার কার্যগুনে জেলা পুলিশের সদস্য, জেলার সাধারণ মানুষ, সকল দপ্তরের নিকট একজন আস্থাভাজন, বিশ্বাসযোগ্য, কর্মপরায়ন, পেশাদার ও মানবিক পুলিশ সুপার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
পুষ্প সুসজ্জিত গাড়িতে রশিটেনে তাকে বিদায় জানানোর সময় ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের পুলিশ সুপার মো: বেলায়েত হোসেন,পিবিআই সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মীর সাফিন মাহামুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সজীব খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপারেশন কনক কুমার দাস, সদর সার্কেল অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামান, কালিগঙ্গা সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আমিনুল ইসলাম, দেবহাটা সার্কেল এসএম জামিল আহমেদ, তালা সার্কেল,ট্রাফিক পুলিশের টিআই এডমিন শ্যামল কুমার চৌধুরী, ট্রাফিক পরিদর্শক হাসান মল্লিক,তালা থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান,কলারোয়া থানার ওসি নাছির উদ্দিন মৃধা,দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ, সদর ওসি স.ম কাইয়ুম, শ্যামনগর থানার ওসি কার্জী ওয়াহিদ মুর্শিদ,ডিএসবির পরিদর্শক রেজাউল, ডিবির ওসি বাবুল আক্তার, ডিবির পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম, ডিবির পরিদর্শক মামুন সিদ্দিক, সদর থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন তারেক আজিজ,সদর ফাড়ির আইসি পরিদর্শক জহুরুল ইসলাম, ট্রাফিক সার্জেন্ট মুকুল, ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহাবুব সহ বিভিন্ন পদমর্যার পুলিশ সদস্যগণ উপস্থিত থেকে আবেঘন পরিবেশে তাদের অবিভাবক কে রশি টেনে বিদায় জানান।